শেয়ারবাজারে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা নিজেদের পকেটে নিয়ে নিয়েছেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। আর এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
মূলত, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তন, সরাসরি তালিকাভুক্তি, বুক বিল্ডিং পদ্ধতি, প্লেসমেন্ট-বাণিজ্য, বোনাস শেয়ার ইস্যুসহ নানাভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এবং ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
শেয়ারবাজারে অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। কমিটি প্রতিবেদনে এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত প্রাথমিক বাজারের সঙ্গে জড়িত ছিল। আর সেকেন্ডারি বাজারের সক্রিয় হিসেবে রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর নাম।
তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গতকাল বৃহস্পতিবার টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজকে বলেছেন, সালমান এফ রহমানের নাম ছিয়ানব্বইয়ের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদনেও বড় আকারে ছিল। এবার তাঁর নাম ওঠেনি কিন্তু তাঁর পরিচালিত কোম্পানির নাম এসেছে। প্লেসমেন্ট, আইপিও প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মোসাদ্দেক আলী ফালু ও তাঁর সহযোগীদের নাম এসেছে। কিন্তু তাঁরা পেছনে ছিলেন, সামনে ছিলেন না। তাঁরা তো এখন আসবেন না। কারণ বিরোধী দল এখন এসইসির কাছ থেকে কোনো রকমের সহায়তা পাবে না।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ সময় বলেন, ‘জড়িত ব্যক্তিদের কেউ সরকারি দল করেন, কেউ বিরোধী দল করেন। আবার অনেকে কোনো দলই করেন না। তবে এটাকে পলিটিক্স বলব, নাকি মানিটিক্স বলব, সেটা একটি বিষয়। এখানে রাজনীতি থাকে না। তবে যেটা হতে পারে তা হলো, যখন যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, সেই দলীয় ব্যক্তিরা সামনে থাকেন। আর সরকার বদল হলে অন্যরা সামনে চলে আসেন। এখানে রাজনীতি নয়, আসল উদ্দেশ্য অর্থ।’
গতকাল রাতে টেলিফোনে সালমান এফ রহমান লন্ডন থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনের মধ্যে থেকেই সবকিছু করা হয়েছে। আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করিনি।’ দেশে ফিরে তদন্ত রিপোর্ট দেখে তার পরই কথা বলবেন বলেও তিনি জানান। বিদেশে থাকায় মোসাদ্দেক আলীকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গতকাল অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিটি শেয়ারবাজারে অনৈতিক কাজ ও কারসাজি হয়েছে—এমন অনেক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছে। এসব কাজে কোম্পানি, সম্পদ মূল্যায়নকারী সংস্থা, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ডিলার-ব্রোকারসহ ইস্যু ব্যবস্থাপকদের দায়ী করা হয়েছে। তবে কমিটি মনে করে, সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি দায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
কমিটি বলেছে, সব ধরনের দুর্নীতি অস্বাভাবিকভাবে অনুমোদন দিয়ে বৈধতা দেওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং এর জন্য এসইসি দায়ী। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটি এসইসি পুনর্গঠনের সুপারিশ করেছে।
এ ছাড়া কমিটি প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে বাণিজ্য করার কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, প্লেসমেন্ট এখন ঘুষের আধুনিক সংস্করণে পরিণত হয়েছে। কমিটি এসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে শেয়ার ব্যবসার প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অফিসের কাজকর্ম ফেলে কম্পিউটারে বসে শেয়ার ট্রেডিং একটি নৈমিত্তিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে অফিসের কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তদন্ত কমিটি সরকারি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের নিজ বা পরিবারের সদস্যদের নামে শেয়ার ব্যবসা কঠোর হস্তে বন্ধ করার সুপারিশ করেছে।
এ ছাড়া কমিটি প্রয়োজনে স্টক এক্সচেঞ্জে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে হলেও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করা, মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজার পৃথক রাখতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, মার্চেন্ট ব্যাংকে খোলা অমনিবাস অ্যাকাউন্ট বন্ধ এবং সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করার সুপারিশ করেছে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটি প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার। প্রতিবেদনে শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর কারসাজিসহ নানা উপায়ে অর্থ তুলে নেওয়ার অনেকগুলো ঘটনার উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকগুলো উদাহরণ রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ার নেওয়ার। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো পারস্পরিক যোগসাজশে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে বলেও তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। আবার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সক্রিয় সদস্য হলেও শেয়ারবাজারে এক হয়ে ব্যবসা করেন—এ ধরনের ঘটনার কথাও প্রতিবেদনে রয়েছে। ১৯৯৬-এর শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ রকম কয়েকজন এবারও কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংকট সৃষ্টির জন্য কে দায়ী: সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি বলেছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও ইস্যু) এবং প্রাক-আইপিও কার্যক্রমে সরাসরি তালিকাভুক্তি (ডাইরেক্ট লিস্টিং), কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, উচ্চ নির্দেশিত (ইনডিকেটিভ) মূল্য নির্ধারণ, বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় কারসাজি বা ম্যানিপুলেশন, প্লেসমেন্টে অস্বচ্ছতা—এসব অনৈতিক কাজে ইস্যুয়ার কোম্পানি, ইস্যু ব্যবস্থাপক, সম্পদ মূল্যায়নকারী সংস্থা, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অডিট ফার্ম, ডিলার ও ব্রোকারসহ অনেকেই জড়িত। আবার সার্কুলার ট্রেডিং, ব্লক ট্রেডিং, অস্বাভাবিক লেনদেন—এসব নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য লেনদেনকারী, ডিলার ও ব্রোকারসহ অনেকে দায়ী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাইট শেয়ার, প্রেফারেন্স শেয়ার, অনগদ লাভের বিপরীতে বোনাস শেয়ার ইস্যুকরণ প্রভৃতি কাজের জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানির দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক হিসেবে এসব অপকর্ম, অস্বচ্ছতা, অনৈতিকতা পরীক্ষা করার দায়িত্ব এসইসির। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অন্যায়গুলো সংঘটিত হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং সব ধরনের দুর্নীতি অস্বাভাবিকভাবে অনুমোদন দিয়ে বৈধতা দেওয়া তথা সংকট সৃষ্টির জন্য এসইসিই দায়ী।
এসইসির সার্বিক পুনর্গঠন: কমিটি মনে করে, অনৈতিকতা ও পেশাগত ব্যর্থতার দায়ে এসইসির ভাবমূর্তি অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত। দায়িত্ব পালনে সংস্থাটি অক্ষম হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া এখনকার বড় পুঁজিবাজার পরিচালনার মতো জনবল, দক্ষতা বা নৈতিকতা কোনোটাই তাদের নেই। এ অবস্থায় সার্বিক পুনর্গঠন প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আইন বিশেষজ্ঞ, সৎ, দক্ষ ও অতীতে সফল হয়েছেন এমন পেশাজীবীদের নিয়ে সংস্থাটির পুনর্গঠন প্রয়োজন। দরকার জনবল বৃদ্ধির। তবে মেধাবী ও যোগ্য জনবল আকর্ষণ করতে হবে। আর এ জন্য বাজারভিত্তিক বেতনকাঠামো নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা আলাদা করা: তদন্ত কমিটি ডিমিউচুয়ালাইজেশনের সুপারিশ করে বলেছে, এর অর্থ হলো স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করা। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জকে পুঁজিবাজারের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক বলা হয়। ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় চলে এলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালনে অচলতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের দ্রুত ডিমিউচুয়ালাইজেশন হওয়া প্রয়োজন।
কমিটি বলেছে, ভারতে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করে সরকার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের চাপ প্রয়োগ করেছিল। পাকিস্তানেও এই প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশে যত দ্রুত করা যায়, ততই মঙ্গল। প্রয়োজনে স্টক এক্সচেঞ্জে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজটি করা উচিত।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের অর্থায়ন: সূত্রমতে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও অর্থবাজারকে পৃথক রাখা বিশ্বস্বীকৃত রীতি। ব্যাসেল নীতিমালা এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছে। কারণ পুঁজিবাজারে নিজস্ব পুঁজি থাকবে, অন্যের টাকা নয়। আমানত ব্যাংকের নিজস্ব অর্থ নয়, বরং গ্রাহকের নিজস্ব টাকা। ব্যাংক ট্রাস্টির ভূমিকায় গ্রাহকের আমানত জমা রাখে। আমানতকারীর অনুমতি ছাড়া এই অর্থ ব্যাংক পুঁজিবাজারে খাটাতে পারে না। এ কারণে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংকিং আইনে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিলকে ব্যাংকের ইক্যুইটির (মালিকের পুঁজি) অনুপাত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আমানতের ১০ শতাংশ বিনিয়োগের অনুমতি রয়েছে, যা প্রথাসিদ্ধ নয় এবং ব্যাংকের জন্য হুমকি। এ অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(২) ধারা সংশোধন করে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে ব্যাংকের পুঁজি বা ইক্যুইটির অনুপাতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
আইপিও এবং কার্ব মার্কেট: তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইপিও অনুমতির আগেই মূলধন বাড়ানোর আবরণে ‘প্লেসমেন্ট’-বাণিজ্যের সূচনা দেশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে এসইসির কোনো নিয়মাচার নেই। কেন নিয়মাচার তৈরি করছে না, তাও বোধগম্য নয়। নিয়মাচারের অভাবে প্লেসমেন্টের কার্ব মার্কেট সৃষ্টি হয়েছে। ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থাকে প্লেসমেন্ট ইস্যু করে ইস্যুয়ার কোম্পানি। আবার বেশি দামে অল্প দিনের মধ্যেই প্লেসমেন্ট বিক্রি করে দেয় কোম্পানি। প্রভাবশালী ব্যক্তি মুফতে লাভ পেয়ে যান। ফলে, প্লেসমেন্ট এখন ঘুষের আধুনিক সংস্করণে পরিণত হয়েছে। সমাজ কলুষিত হচ্ছে। কমিটি বলেছে, এর ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। প্লেসমেন্ট বিক্রয়ের পর আইপিও অনুমতি না পাওয়ায় অনেকের টাকা আটকে গেছে। তাঁরা হা-হুতাশ করছেন। এ ধরনের অরাজকতা চলতে দিয়ে এসইসি সংকটের জন্ম দিয়েছে। অবিলম্বে নিয়মাচার প্রণয়ন করতে হবে।
অমনিবাস অ্যাকাউন্টের অন্তরালে অস্বচ্ছতা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনত শেয়ার লেনদেন শুধু বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা যায়। কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকার নিজেরা ইনভেস্টর অ্যাকাউন্ট খুলছে এবং প্রতি পাঁচ থেকে ১০ হাজার অ্যাকাউন্টের জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব নামে একটি মাত্র বিও অ্যাকাউন্ট রাখছে। ফলে বিনিয়োগকারী থাকছে বিও অ্যাকাউন্টের অন্তরালে, লোকচক্ষুর আড়ালে। দুর্নীতি, অনিয়মের আখড়া হয়ে উঠেছে মার্চেন্ট ব্যাংকের ইনভেস্টর হিসাবগুলো। যাঁদের শেয়ার বেচাকেনা হচ্ছে, বিও অ্যাকাউন্টে তাঁদের নাম নেই। অতএব আইনানুগ স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে খোলা প্রতিটি বিনিয়োগকারীর হিসাবের জন্য বিও অ্যাকাউন্ট খোলা এবং অমনিবাস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
নিয়ন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লেনদেন: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের শেয়ার ব্যবসা করা অনুচিত। অথচ এসইসির নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল কবীর ভূঁইয়া স্ত্রীর নামে শেয়ার ব্যবসা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আইসিবির ডিজিএম কফিল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ব্যবসা করেছেন। তদন্ত বিশদভাবে করলে আরও অনেক নাম বের হয়ে আসবে। অফিসের কাজকর্ম ফেলে কম্পিউটারে বসে শেয়ার ট্রেডিং একটি নৈমিত্তিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কমিটি সরকারি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের নিজ বা পরিবারের সদস্যদের নামে শেয়ার ব্যবসা কঠোর হস্তে বন্ধ করার সুপারিশ করেছে।
যোগাযোগ করা হলে আনোয়ারুল কবীর ভূঁঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী তো আর্থিকভাবে আমার ওপর নির্ভরশীল না। তিনি এ দেশের একজন করদাতা। তা ছাড়া তাঁর স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তা রয়েছে। সেই হিসেবে তিনি বিনিয়োগের অধিকার সংরক্ষণ করেন।’
কিন্তু এসইসির আইনে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নির্ভরশীল নিকটাত্মীয়দের (স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে) বিনিয়োগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ আইনটি যখন করা হয়, তার আগেই তিনি বিনিয়োগ করেছেন।
চেষ্টা করেও কফিল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে গতকাল পাওয়া যায়নি।
কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ‘সার্ভেয়ার্স ইনস্টিটিউশন’ নেই, নিবন্ধিত সার্ভেয়ারও নেই। এই সুযোগে কোম্পানিগুলো সম্পদের অতিমূল্যায়ন করে বাজার প্রভাবিত করছে। কোম্পানিগুলো ‘ডেফারড ট্যাক্সের’ জন্য সংস্থানও রাখে না। এসইসি অতিমূল্যায়ন রোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অতএব, দেশে চার্টার্ড সার্ভেয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ভ্যালুয়ারের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তবে ভ্যালুয়ার ও অডিটর দুটি ভিন্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম হতে হবে।
প্রতিবেদনে সম্পদ কী পরিমাণে পুনর্মূল্যায়িত করা হয়েছে তার কয়েকটি উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। যেমন, লিব্রা ইনফিউশনস পুনর্মূল্যায়ন করেছে ৩৪৭২ শতাংশ, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ ৬২৬ শতাংশ, রহিম টেক্সটাইল ৫১৮ শতাংশ, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম ২৯৮ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন ৪১৩ শতাংশ, ওশেন কনটেইনার্স ২৯৬ শতাংশ এবং শাইনপুকুর সিরামিক ১২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ওরিয়ন ইনফিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান করিম বলেন, গত আট-দশ বছরে ওরিয়ন ইনফিউশনের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন হয়নি। সুতরাং ৪১৩ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য কীভাবে এল তিনি বুঝতে পারছেন না।
শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তন: কমিটি মনে করে, ১০০ টাকার শেয়ার ১০ টাকায় পরিবর্তন বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। বিষয়টি মানসিক ভ্রমজনিত। কেননা, ১০০ টাকার শেয়ার ৮০০ টাকা হলে যতটা মূল্য বৃদ্ধি মনে হয়, ১০ টাকার শেয়ার ৮০ টাকা হলে তেমনটা হয় না। এ কারণে বাজার পুঁজীকরণ বৃদ্ধিতে ১০ টাকায় রূপান্তর করা কোম্পানিগুলোর অংশ সাড়ে ৮১ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি অবিশ্বাস্য হলেও ঘটেছে। অতএব, এখনো ১০০ টাকার শেয়ারের যেসব কোম্পানি বাকি রয়েছে, তাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে ১০ টাকায় রূপান্তর করে অভিহিত মূল্য একই রকম করা উচিত।
News Sours http://www.prothom-alo.com/detail/news/145146


4:55 AM
Pedia For Bangladesh

0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/