‘চমৎকার!’ গতকাল বিকেলে শব্দটি শোনা গেছে বারবার। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র গেরিলা দেখে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বলাকা সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার সময় একে অন্যের কাছে এমন মন্তব্য করছিলেন। দর্শকদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস; ছিল একটি সুন্দর, সফল চলচ্চিত্র দেখার তৃপ্তি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সমরের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও শিল্পের নান্দনিকতার সমন্বয়ে জাতির সেই গৌরবময় সংগ্রামের ইতিহাসকে চলচ্চিত্রায়িত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। আগামীকাল পয়লা বৈশাখ সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাবে। তার আগে গতকাল মঙ্গলবার ছবিটির সৌজন্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো। এ উপলক্ষে বলাকা সিনেমা হল পরিণত হয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুণীজনদের মিলনমেলায়।
স্বাগত বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। গেরিলা ছবির পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, এর কাহিনি সত্য ঘটনানির্ভর হলেও শিল্পের দাবি মিটিয়েই তা উপস্থাপন করা হয়েছে। যা ঘটেছে, তা তুলে ধরা এবং যা ঘটতে পারত, সেই ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। ছবিটির কলাকুশলীদের ধন্যবাদ জানান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ছবির সংগীতপরিচালক ও পোশাক ডিজাইনার শিমূল ইউসুফ, চলচ্চিত্রনির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকি, নির্বাহী পরিচালক এষা ইউসুফ, ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অংশ নেওয়া এ টি এম শামসুজ্জামান, জয়া আহসান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, আহমেদ রুবেল প্রমুখ।
ছবির শুরুতে দেখা যায় ১৯৭১ সালের একটি বিশেষ দিনের ঘটনা। শহরে তখন ধ্বংসযজ্ঞ। এমনই অবস্থায় সাংবাদিক হাসান কাজের তাগিদে বের হতে চাইছে। আর তার স্ত্রী বিলকিস বাধা দিয়ে বলে, ‘এমন অবস্থার মধ্যে না গেলেই কি হয় না?’ কিন্তু সাংবাদিকতা পেশার রোমাঞ্চে ঘরের বাইরে গেল হাসান। এরপর তাকে খোঁজার জন্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে লড়াইয়ে নামে বিলকিস। ছবিতে পুরো নয় মাসের কাহিনি দেখানো হয়নি। শুধু জুলাই ও আগস্ট মাসের কাহিনি থাকছে এই ছবিতে। ছবির মূল আকর্ষণ হলো জুলাই মাসের চার-পাঁচ দিনের ঘটনা।
প্রসঙ্গত, বিলকিসকে নিয়েই সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন তাঁর নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাসটি। সেই উপন্যাসের সঙ্গে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্ম-অভিজ্ঞতার মিশেলে নির্মিত হয়েছে গেরিলা। আর মুক্তিযোদ্ধাটি হলেন পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ছবির প্রতিটি চরিত্রও তাই পরিচালকের খুব চেনা। শাহাদত চৌধুরী, সুবাদার বেলায়েত, ফতেহ আলীসহ আরও অনেক চরিত্র আছে সেখানে।
সরকারি অনুদানে নির্মিত ছবিটি এরই মধ্যে বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পেয়েছে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও আরিয়াল ক্রিয়েটিভ সেন্টার যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেছে।
কাল পয়লা বৈশাখ সারা দেশের ১৩টি প্রেক্ষাগৃহে একযোগে গেরিলা মুক্তি পাবে। প্রেক্ষাগৃহগুলো হলো: ঢাকার বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, অভিসার ও স্টার সিনেপ্লেক্স, সাভারের সেনা মিলনায়তন, যশোরের মণিহার, ময়মনসিংহের পূরবী, খুলনার সংগীতা, রংপুরের শাপলা, শেরপুরের লিখন, সিরাজগঞ্জের মৌসুমী, নওগাঁর তাজ, দিনাজপুরের মডার্ন ও কাটাখালীর রাজতিলক।
খালিদের ছন্দময় রঙের মেলা
গ্যালারিতে ঢুকে, প্রথমত, শিল্পানুরাগীরা মুগ্ধ হবেন বড় বড় ক্যানভাসে অনেক উজ্জ্বল রঙের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার দেখে। তারপর ধীরে ধীরে নজর কাড়বে চিত্রকর্মের আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু। শিল্পী রং নিয়েছেন প্রকৃতি থেকে, যে প্রকৃতিতে আছে উজ্জ্বল হলুদ রঙের সোনারু গাছ, টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া, ঘন সবুজ জারুলসহ দেশি-বিদেশি বিচিত্র গাছপালা। কোনো কোনো ক্যানভাসে টবে শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, বৈজয়ন্তীসহ নানা রূপ আর রঙের ফুল। এ ছাড়া আছে নানা ঋতুর প্রকৃতি। আছে বৃষ্টিস্নাত নিসর্গ। পাতাঝরা দিনের নিসর্গ। গাছে গাছে নতুন পাতার আগমনে প্রকৃতি কী রূপ ধারণ করে, তাও শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যানভাসে। এসব এঁকেছেন শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘সিম্ফনি অব কালার’। উত্তরার গ্যালারি কায়া এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে তাদের নিজস্ব শিল্পালয়ে। গতকাল বিকেলে এর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি রবিউল হুসাইন ও চিত্রসমালোচক স্থপতি শামসুল ওয়ারেস।
প্রদর্শনীতে অ্যাক্রিলিক ও তেলরঙে আঁকা ৪৫টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনী চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। গ্যালারি খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।
পাঠকের মন্তব্য
Mohammed Uddin
২০১১.০৪.১৩ ০৭:৫৬
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চাই বড় বাজেটে বড় ক্যানভাসে বড় মাপের একটা ছবি কেউ করুক |
Mogra
২০১১.০৪.১৩ ০৯:১২
শাহাদত চৌধুরীকে এই ছবিতে তুলে আনার জন্য বাচ্চু ভাইকে ধন্যবাদ। কেউতো তার কথা আজ আর ভুলেও বলেনা।
Ruhul Amin
২০১১.০৪.১৩ ০৯:৪২
অনেকদিন পর সবাই দল বেঁধে ছবি দেখতে যাব, আশা করছি- অনেকদিন পর আবার একটা ভালো ছবি দেখব! আমি এখনো প্রচণ্ড আবেগ তাড়িত- কিছু কিছু দৃশ্য দেখে সিনেমা হলেই চোখ ভিঁজে উঠবে- গলা ভারি হয়ে যাবে, মাংস-পেশী শক্ত হয়ে যাবে। বাইরে তখনও- মুক্ত যুদ্ধাপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে! মন খারাপ চেহারায় এবং খুব সম্ভবতঃ অসম্ভব এক ভালো লাগা নিয়ে বাড়ি ফিরব!
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-13/news/146306
0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/