বাধ্যতামূলক হলেও পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে না
* ২০টি জাহাজ-ট্যাংকার বহির্নোঙরে, আরও চারটি আসছে * একটি তেলবাহী ট্যাংকার সমুদ্রতীরে আনায় শোকজ * আদালতের আদেশ অমান্য * আগের ২০ জাহাজ ভাঙতে তোড়জোড়
পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে আরও ২০টি পুরোনো জাহাজ-ট্যাংকার আমদানি করা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কাছ থেকে এলসি খোলার অনুমতি নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো চট্টগ্রাম উপকূলের বহির্নোঙরে নিয়ে এসেছেন জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকেরা। সাধারণত এলসি খোলার অনুমতি পাওয়ার পর জাহাজ দেশে আনতে অন্তত এক মাস লাগে। আরও চারটি আসার অপেক্ষায় আছে।
গত ডিসেম্বরে আমদানি করা প্রায় ২০টি পুরোনো জাহাজ এত দিন উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে ভাঙতে পারেননি ইয়ার্ড মালিকেরা। সম্প্রতি এই জাহাজগুলো ভাঙার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
জাহাজভাঙা শিল্পবিষয়ক বিধিমালায় পুরোনো জাহাজ আমদানির আগে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমদানি হওয়া জাহাজগুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম রাখা হয়েছে। আমদানিকারকেরা এই ২৪টি পুরোনো জাহাজ-ট্যাংকার আমদানির ক্ষেত্রে এই নিয়মের কোনোটিই অনুসরণ করেননি।
গতকাল শনিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ১২টি পুরোনো জাহাজ পরিদর্শন করা হয়েছে। দেখা গেছে, আমদানি হওয়া জাহাজের চারটি তেলবাহী ট্যাংকার। পুরোনো জাহাজের মধ্যে তেলের ট্যাংকারে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত বর্জ্য থাকে।
কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়া একটি তেলবাহী ট্যাংকার সমুদ্রতীরে তোলার অপরাধে শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সাবেক সভাপতি জাফর আলমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেনিনসুলা স্টিল মিলস লিমিটেডকে কারণ দর্শাও নোটিশও দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। টামিট ওয়ান নামের আগুনে পুড়ে যাওয়া ওই তেলের ট্যাংকারটি একটি থাই কোম্পানির মালিকানাধীন ছিল।
জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আমদানি করা জাহাজটি সমুদ্রসীমায় আনার পর ঝড়ের কবলে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় নিয়ম ভঙ্গ করে তীরের কাছাকাছি আনা হয়েছে।’
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জুবায়ের আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে কীভাবে পুরোনো জাহাজগুলো আমদানি করা হলো? এর জবাবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছি। পরিবেশ ছাড়পত্রসহ তা আমদানি হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয় তা দেখবে।’
যোগাযোগ করা হলে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জাহাজভাঙা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর গত বুধবার এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। বেশ কটি জাহাজভাঙা ইয়ার্ড তিনি নিজে পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘এরা যাতে পরিবেশসম্মতভাবে এটাকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।’
২১০০ পুরোনো জাহাজ অপেক্ষায়: ২০০৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিয়ম করা হয়েছে, সদস্যভুক্ত দেশগুলো তাদের ২৫ বছরের পুরোনো জাহাজ আর চালাতে পারবে না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের উচ্চ আদালত এই জাহাজগুলো আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশে এ ধরনের জাহাজ আমদানির চেষ্টা চলছে।
এই জাহাজগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন পিসের তৈরি করা প্রতিবেদন ‘অজানা গন্তব্য বা আননোন ডেস্টিনেশনে’ বলা হয়েছে, একটি এক লাখ টন জাহাজে অন্যান্য বর্জ্যের মধ্যে অ্যাজবেস্টস (খনিজ পদার্থ) থাকে দুই হাজার ৪১৩ কেজি, পলিভিনাই কোলোরাইট (পিভিসি) থাকে তিন হাজার ৪৪৮ কেজি, টিবিটি থাকে আট হাজার ২৭৫ কেজি, বিভিন্ন ভারী ধাতু থাকে ১৯ হাজার কেজি, বিভিন্ন পরিমাণ বিষাক্ত তেল থাকে এক লাখ ২৭ হাজার ১০০ লিটার এবং স্লাজ থাকে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৫ লিটার। এই উপাদানগুলোর সংস্পর্শে এলে ক্যানসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রমিকদের পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। এতে উপরিউক্ত উপাদানগুলো কোনো এলাকায় থাকলে সেখানে ‘সাবধান, ক্যানসারের ঝুঁকি আছে’ লেখা থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যের আন্তরাষ্ট্রীয় চলাচল ও অপসারণ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বাসেল কনভেনশন, ১৯৮৯-এর অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র এবং এই কনভেনশনের বিধিবিধান মেনে চলতে বাধ্য। বাসেল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রগুলো ভাঙার জন্য ব্যবহূত জাহাজকে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আদেশ ভঙ্গের ধারাবাহিকতা: ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট জাহাজভাঙা শিল্পবিষয়ক যে আদেশ দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৪টি জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে এই আদেশ লঙ্ঘন করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, পুরোনো জাহাজভাঙা কার্যক্রম তদারকির জন্য শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ খরচে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে। তিন মাসের প্রশিক্ষণব্যবস্থা থাকতে হবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা জাহাজে পিসিবি, পিভিসি ও ভারী ধাতব পদার্থ আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখবেন। সূর্যাস্তের পর জাহাজের ভেতরে কোনো শ্রমিক ঢুকতে পারবেন না। পুরোনো জাহাজ ভাঙার পর এ থেকে যে বিষাক্ত বর্জ্য বের হবে, তা ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নিশ্চিত করতে হবে। জাহাজ ভাঙার ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য নদী, জলাশয়, খাল, সাগর ও সাগরতীরে ফেলা যাবে না। প্রতিটি ইয়ার্ডে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের একজন প্রকৌশলীকে ভাঙা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের নয় নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, কোনো ইয়ার্ড মালিক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পুরোপুরি না মেনে এবং পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া জাহাজ আমদানি করতে পারবেন না। ইয়ার্ডে জাহাজভাঙা কার্যক্রম পুরোপুরি তদারক করার দায়িত্ব পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও শ্রম বিভাগ।
বিএসবিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে জাহাজ ভাঙার জন্য ১০০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টির মতো চালু এবং বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ৪৫টি জাহাজভাঙা শিল্পকে শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে অন্যান্য শিল্পের জন্য প্রযোজ্য নিয়ম মেনে এখন পর্যন্ত কোনো ইয়ার্ড ছাড়পত্র নেয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাফর আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, শিপইয়ার্ড মালিকেরা সব নিয়মকানুন অনুসরণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তেলের ট্যাংকারসহ সাধারণ জাহাজগুলোতে যেসব বিষাক্ত বর্জ্য থাকে, তার বেশির ভাগই পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয়। ফলে বর্জ্য রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণের বিষয়টি অত জরুরি নয়।
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-17/news/147172
* ২০টি জাহাজ-ট্যাংকার বহির্নোঙরে, আরও চারটি আসছে * একটি তেলবাহী ট্যাংকার সমুদ্রতীরে আনায় শোকজ * আদালতের আদেশ অমান্য * আগের ২০ জাহাজ ভাঙতে তোড়জোড়
পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে আরও ২০টি পুরোনো জাহাজ-ট্যাংকার আমদানি করা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কাছ থেকে এলসি খোলার অনুমতি নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো চট্টগ্রাম উপকূলের বহির্নোঙরে নিয়ে এসেছেন জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকেরা। সাধারণত এলসি খোলার অনুমতি পাওয়ার পর জাহাজ দেশে আনতে অন্তত এক মাস লাগে। আরও চারটি আসার অপেক্ষায় আছে।
গত ডিসেম্বরে আমদানি করা প্রায় ২০টি পুরোনো জাহাজ এত দিন উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে ভাঙতে পারেননি ইয়ার্ড মালিকেরা। সম্প্রতি এই জাহাজগুলো ভাঙার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
জাহাজভাঙা শিল্পবিষয়ক বিধিমালায় পুরোনো জাহাজ আমদানির আগে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমদানি হওয়া জাহাজগুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম রাখা হয়েছে। আমদানিকারকেরা এই ২৪টি পুরোনো জাহাজ-ট্যাংকার আমদানির ক্ষেত্রে এই নিয়মের কোনোটিই অনুসরণ করেননি।
গতকাল শনিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ১২টি পুরোনো জাহাজ পরিদর্শন করা হয়েছে। দেখা গেছে, আমদানি হওয়া জাহাজের চারটি তেলবাহী ট্যাংকার। পুরোনো জাহাজের মধ্যে তেলের ট্যাংকারে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত বর্জ্য থাকে।
কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়া একটি তেলবাহী ট্যাংকার সমুদ্রতীরে তোলার অপরাধে শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সাবেক সভাপতি জাফর আলমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেনিনসুলা স্টিল মিলস লিমিটেডকে কারণ দর্শাও নোটিশও দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। টামিট ওয়ান নামের আগুনে পুড়ে যাওয়া ওই তেলের ট্যাংকারটি একটি থাই কোম্পানির মালিকানাধীন ছিল।
জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আমদানি করা জাহাজটি সমুদ্রসীমায় আনার পর ঝড়ের কবলে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় নিয়ম ভঙ্গ করে তীরের কাছাকাছি আনা হয়েছে।’
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জুবায়ের আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে কীভাবে পুরোনো জাহাজগুলো আমদানি করা হলো? এর জবাবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছি। পরিবেশ ছাড়পত্রসহ তা আমদানি হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয় তা দেখবে।’
যোগাযোগ করা হলে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জাহাজভাঙা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর গত বুধবার এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। বেশ কটি জাহাজভাঙা ইয়ার্ড তিনি নিজে পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘এরা যাতে পরিবেশসম্মতভাবে এটাকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।’
২১০০ পুরোনো জাহাজ অপেক্ষায়: ২০০৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিয়ম করা হয়েছে, সদস্যভুক্ত দেশগুলো তাদের ২৫ বছরের পুরোনো জাহাজ আর চালাতে পারবে না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের উচ্চ আদালত এই জাহাজগুলো আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশে এ ধরনের জাহাজ আমদানির চেষ্টা চলছে।
এই জাহাজগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন পিসের তৈরি করা প্রতিবেদন ‘অজানা গন্তব্য বা আননোন ডেস্টিনেশনে’ বলা হয়েছে, একটি এক লাখ টন জাহাজে অন্যান্য বর্জ্যের মধ্যে অ্যাজবেস্টস (খনিজ পদার্থ) থাকে দুই হাজার ৪১৩ কেজি, পলিভিনাই কোলোরাইট (পিভিসি) থাকে তিন হাজার ৪৪৮ কেজি, টিবিটি থাকে আট হাজার ২৭৫ কেজি, বিভিন্ন ভারী ধাতু থাকে ১৯ হাজার কেজি, বিভিন্ন পরিমাণ বিষাক্ত তেল থাকে এক লাখ ২৭ হাজার ১০০ লিটার এবং স্লাজ থাকে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৫ লিটার। এই উপাদানগুলোর সংস্পর্শে এলে ক্যানসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রমিকদের পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। এতে উপরিউক্ত উপাদানগুলো কোনো এলাকায় থাকলে সেখানে ‘সাবধান, ক্যানসারের ঝুঁকি আছে’ লেখা থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যের আন্তরাষ্ট্রীয় চলাচল ও অপসারণ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বাসেল কনভেনশন, ১৯৮৯-এর অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র এবং এই কনভেনশনের বিধিবিধান মেনে চলতে বাধ্য। বাসেল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রগুলো ভাঙার জন্য ব্যবহূত জাহাজকে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আদেশ ভঙ্গের ধারাবাহিকতা: ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট জাহাজভাঙা শিল্পবিষয়ক যে আদেশ দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৪টি জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে এই আদেশ লঙ্ঘন করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, পুরোনো জাহাজভাঙা কার্যক্রম তদারকির জন্য শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ খরচে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে। তিন মাসের প্রশিক্ষণব্যবস্থা থাকতে হবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা জাহাজে পিসিবি, পিভিসি ও ভারী ধাতব পদার্থ আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখবেন। সূর্যাস্তের পর জাহাজের ভেতরে কোনো শ্রমিক ঢুকতে পারবেন না। পুরোনো জাহাজ ভাঙার পর এ থেকে যে বিষাক্ত বর্জ্য বের হবে, তা ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নিশ্চিত করতে হবে। জাহাজ ভাঙার ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য নদী, জলাশয়, খাল, সাগর ও সাগরতীরে ফেলা যাবে না। প্রতিটি ইয়ার্ডে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের একজন প্রকৌশলীকে ভাঙা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের নয় নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, কোনো ইয়ার্ড মালিক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পুরোপুরি না মেনে এবং পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া জাহাজ আমদানি করতে পারবেন না। ইয়ার্ডে জাহাজভাঙা কার্যক্রম পুরোপুরি তদারক করার দায়িত্ব পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও শ্রম বিভাগ।
বিএসবিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে জাহাজ ভাঙার জন্য ১০০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টির মতো চালু এবং বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ৪৫টি জাহাজভাঙা শিল্পকে শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে অন্যান্য শিল্পের জন্য প্রযোজ্য নিয়ম মেনে এখন পর্যন্ত কোনো ইয়ার্ড ছাড়পত্র নেয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাফর আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, শিপইয়ার্ড মালিকেরা সব নিয়মকানুন অনুসরণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তেলের ট্যাংকারসহ সাধারণ জাহাজগুলোতে যেসব বিষাক্ত বর্জ্য থাকে, তার বেশির ভাগই পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয়। ফলে বর্জ্য রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণের বিষয়টি অত জরুরি নয়।
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-17/news/147172
0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/