১৫ মন্তব্য
থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে অতিরিক্ত দামে চাল কিনছে সরকার। এই দুটি দেশ থেকে সাড়ে চার লাখ টন চাল কিনতে গত মার্চ মাসে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তি করেছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। থাইল্যান্ড থেকে প্রতি টন চাল আমদানি করতে ৫৮০ মার্কিন ডলার ও ভিয়েতনাম থেকে ৫৭৫ ডলার দাম পড়ছে। কিন্তু একই সময়ে বেসরকারি আমদানিকারকেরা ভিয়েতনাম থেকে প্রতি টন চাল ৪২০-৪৩০ ডলারে আনছে।
থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানিকারকদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে প্রতি টন পাঁচ শতাংশ ভাঙা চালের (খুব ভালো) দাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ ডলার। ২৫ শতাংশ ভাঙা চালের (মাঝারি মানের) দাম ধরা হয়েছে ৪৬৫ থেকে ৪৭২ ডলার। থাইল্যান্ডভিত্তিক বেশ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলের দর অনুযায়ী পরিবহন খরচসহ ৪৮০ থেকে ৫০০ ডলারে তারা বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করতে প্রস্তুত।
সরকারি ও বেসরকারি দরপত্রের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চাল সরবরাহ করছে থাইল্যান্ডের বহু বিতর্কিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চাইয়াপর্ন রাইস কো.। ইরাকসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ঘুষ দিয়ে আমদানি আদেশ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের একটি স্বতন্ত্র তদন্ত দল প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে প্রায় এক লাখ টন চাল সরবরাহ করছে।
বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বিষয়ে ২৯ মার্চ থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক ব্যাংকক পোস্ট ‘বাংলাদেশে চাল রপ্তানি চুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে বাংলাদেশে দুই লাখ টন চাল রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে এমনভাবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা চাল সরবরাহ-প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারে। বাজারমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে চাল কেনায় বিশ্ববাজারে চালের দামও বাড়ছে বলে এই প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে দুই লাখ টন চাল আনা হচ্ছে। প্রতি টনে ৮০ ডলার এবং ভিয়েতনাম থেকে কেনা চালে প্রতি টনে ১৪৫ ডলার অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশকে। এ হিসাবে থাইল্যান্ড থেকে চাল আনতে ১১৬ কোটি ৮০ লাখ ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আনতে ২৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অর্থাৎ ৩৫০ থেকে ৩৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে সরকারকে।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে থাইল্যান্ড রাইস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এশিয়া গ্রেইন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যান বি প্রথম আলোকে বলেন, থাইল্যান্ড থেকে তাঁর কোম্পানি প্রতি টন পাঁচ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল ৪৪০ ডলারে কিনে আফ্রিকায় রপ্তানি করছে। বাংলাদেশে একই মানের চাল রপ্তানি করলে কোনোভাবেই ৫০০ ডলারের বেশি পড়বে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান চাল রপ্তানি করছে, তারা পাঁচ শতাংশ ভাঙা চাল রপ্তানির কথা বলে অপেক্ষাকৃত কম দামি (১৫ শতাংশ ভাঙা) চাল সরবরাহ করছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম সিন্ডিকেটের চেয়ারম্যান আবুল বশর প্রথম আলোকে জানান, গত তিন মাসে তাঁরা মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও পাকিস্তান থেকে প্রতি টন চাল ৪২০ থেকে ৪৩০ ডলারে কিনেছেন।
আরেক বড় আমদানিকারক এবং বাংলাদেশ চাল আমদানিকারক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তাঁরা ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে প্রতি টন চাল ৪২০ ডলার দরে এনেছেন। বর্তমানে ভিয়েতনাম থেকে ৪৬০ ডলার ও পাকিস্তান থেকে সেদ্ধ চাল ৪৮০ ডলার দরে কেনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ যখন বিশ্ববাজারে চাল পাচ্ছিল না, তখন থাইল্যান্ড সরকার চাল রপ্তানিতে রাজি হয়েছিল। এখন দাম কমে যাওয়ায় চাইলেই আমদানি চুক্তি বাতিল করা যাবে না। চুক্তি বাতিল করলে পরে থাইল্যান্ডের কাছ থেকে আর চাল পাওয়া যাবে না।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি খাত যদি অল্প দামে চাল আমদানি করতে পারে, তাহলেও সরকারেরও উচিত ছিল একই দামে চাল আনা। সাধারণত যে সময়ে আমদানি হবে, সেই সময়কার দাম ধরে রপ্তানি চুক্তি হয়ে থাকে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যত দামেই চুক্তি হোক না কেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা উচিত বর্তমান দরেই চাল সরবরাহ করতে।
সরবরাহকারী কারা: ১৬ এপ্রিল থাইল্যান্ড থেকে কেনা চালের জাহাজ বাংলাদেশের পথে রওনা হবে। এই চাল সরবরাহ করছে থাইল্যান্ডভিত্তিক এশিয়া গোল্ডেন রাইস কো., ক্যাপিটাল রাইস কোম্পানি, চাইয়াপর্ন রাইস কো. ও কামোলজি কো.।
খাদ্য বিভাগ দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করছে। এই চাল সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে চাইয়াপর্ন রাইস কো.। থাইল্যান্ড সরকারের মাধ্যমে এই কোম্পানি ৫৮০ ডলারে চাল সরবরাহ করলেও তারা সরাসরি ৫০৭ ডলারে সরবরাহ করছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেনের তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় চাইয়াপর্ন ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার মূল্যে চাল, চিনি ও সবজি সরবরাহ করে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের একটি দলের অনুসন্ধানে এর প্রমাণ মেলে।
২০০২ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা কোয়ালিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের ‘সাদ্দাম ও তাঁর পুত্রদের অর্থ উপার্জনের উৎস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চাইয়াপর্ন তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ইরাকে খাদ্য বিক্রি করে। খাদ্য সরবরাহের কাজ পেতে কোম্পানিটি সাদ্দাম ও তাঁর পুত্রদের ঘুষ দেয়। এ ছাড়া নাইজেরিয়াতেও ঘুষের বিনিময়ে চাল সরবরাহের আদেশ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ দাম বাড়াচ্ছে: চালের বাজার চড়া করার পেছনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে দায়ী করছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ দুই লাখ টন আমদানি বাড়িয়ে মোট আট লাখ টন চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে চাল রপ্তানিকারক প্রধান দেশ হচ্ছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। এই দুটি দেশ থেকে বাংলাদেশ মূলত ২৫ শতাংশ ভাঙা চাল আমদানি করে থাকে।
এফএও, ইউএসডিএ ও রাইস অনলাইনে চালের বাজার পর্যবেক্ষণবিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে চালের দাম কমতে থাকে। থাইল্যান্ড বিশ্ববাজারে পাঁচ শতাংশ ভাঙা আতপ চালের দাম ফেব্রুয়ারির শেষ দিকের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কমে ৫০২ থেকে ৫১৯ ডলারে বিক্রি শুরু করে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম একই চাল ফেব্রুয়ারির চেয়ে তিন শতাংশ কমিয়ে ৪৬০ ডলারে বিক্রি করছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক থেকে গত ৫ এপ্রিল প্রকাশিত গ্রেইন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বতর্মানে আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ডের চেয়ে ভিয়েতনামের চালের মূল্য প্রতি টনে ২০ থেকে ৩০ ডলার বেশি। গত সপ্তাহে এই পার্থক্য ছিল ৫০ ডলার। গত ২৮ মার্চ থাইল্যান্ডের কাছ থেকে বাংলাদেশ দুই লাখ টন চাল আমদানি চুক্তির পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়।
পাঠকের মন্তব্য
Abdullah al-mamun. রংপুর।
২০১১.০৪.১২ ০১:৫৪
বেসরকারী আমদানিকারকরা যদি কম মুল্য দিয়ে চাল আমদানি করতে পারে তবে সরকার কেন পারবেনা।এখানে কোন গোষ্ঠিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বেশি দাম ধরে চাল কেনা হচ্ছে।এই চুক্তি বাতিল করে বর্তমান দামে চাল আমদানি করা উচিত।
mahfujul islam
২০১১.০৪.১২ ০২:১০
খালি চুরি আর চুরি...
abdul matin
২০১১.০৪.১২ ০২:১২
this is Character of awamileage
jakir hussain
২০১১.০৪.১২ ০৩:২২
৩৯০ কোটি টাকা বেশী দিয়ে বিদেশ থেকে চাল কেনো কেনা হছ্বে আমরা কি তা জানতে পারি ? আর ৩৯০ কোটি টাকা কার পকেটে যাবে তা আমাদের জানার দরকার নেই। কারন আমরা তা ভালো করেই জানি।
Deshi
২০১১.০৪.১২ ০৩:৩৫
Ofcourse it will expensive than in market or private links. Because, all exporter already know it very clearly that, BD Ministry are corrupted & take the BIG amount as interest in their own pocket!
Kulsum al-nazrul
২০১১.০৪.১২ ০৩:৫৬
জনগনের অর্থ অপচয় করে জনসেবা।
ahmedmahfuge
২০১১.০৪.১২ ০৫:১৩
corruption.......
salahuddin shamsuddin
২০১১.০৪.১২ ০৬:১৫
Thats normal.Why making noise about it?The gov.is making under ground money from the deal....:D
razu
২০১১.০৪.১২ ০৭:১৭
টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গা চাল?????????
Afjal
২০১১.০৪.১২ ০৭:৪২
Now, I have the same demand, I want Food Minister resignation which Jubo League demand. We don't want to seed another Tareq Zia.
Faizul Islam
২০১১.০৪.১২ ০৮:৫০
খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক অবশ্য প্রধানমন্ত্রী কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে - 'চালের দাম বৃদ্ধির জবাব বিএনপি কে দিতে হবে।' কেন তার নমুনা দেখলাম। তদন্ত হওয়া দরকার।
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-12/news/146097
থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে অতিরিক্ত দামে চাল কিনছে সরকার। এই দুটি দেশ থেকে সাড়ে চার লাখ টন চাল কিনতে গত মার্চ মাসে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তি করেছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। থাইল্যান্ড থেকে প্রতি টন চাল আমদানি করতে ৫৮০ মার্কিন ডলার ও ভিয়েতনাম থেকে ৫৭৫ ডলার দাম পড়ছে। কিন্তু একই সময়ে বেসরকারি আমদানিকারকেরা ভিয়েতনাম থেকে প্রতি টন চাল ৪২০-৪৩০ ডলারে আনছে।
থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানিকারকদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে প্রতি টন পাঁচ শতাংশ ভাঙা চালের (খুব ভালো) দাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ ডলার। ২৫ শতাংশ ভাঙা চালের (মাঝারি মানের) দাম ধরা হয়েছে ৪৬৫ থেকে ৪৭২ ডলার। থাইল্যান্ডভিত্তিক বেশ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলের দর অনুযায়ী পরিবহন খরচসহ ৪৮০ থেকে ৫০০ ডলারে তারা বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করতে প্রস্তুত।
সরকারি ও বেসরকারি দরপত্রের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চাল সরবরাহ করছে থাইল্যান্ডের বহু বিতর্কিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চাইয়াপর্ন রাইস কো.। ইরাকসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ঘুষ দিয়ে আমদানি আদেশ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের একটি স্বতন্ত্র তদন্ত দল প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে প্রায় এক লাখ টন চাল সরবরাহ করছে।
বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বিষয়ে ২৯ মার্চ থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক ব্যাংকক পোস্ট ‘বাংলাদেশে চাল রপ্তানি চুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে বাংলাদেশে দুই লাখ টন চাল রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে এমনভাবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা চাল সরবরাহ-প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারে। বাজারমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে চাল কেনায় বিশ্ববাজারে চালের দামও বাড়ছে বলে এই প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে দুই লাখ টন চাল আনা হচ্ছে। প্রতি টনে ৮০ ডলার এবং ভিয়েতনাম থেকে কেনা চালে প্রতি টনে ১৪৫ ডলার অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশকে। এ হিসাবে থাইল্যান্ড থেকে চাল আনতে ১১৬ কোটি ৮০ লাখ ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আনতে ২৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অর্থাৎ ৩৫০ থেকে ৩৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে সরকারকে।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে থাইল্যান্ড রাইস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এশিয়া গ্রেইন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যান বি প্রথম আলোকে বলেন, থাইল্যান্ড থেকে তাঁর কোম্পানি প্রতি টন পাঁচ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল ৪৪০ ডলারে কিনে আফ্রিকায় রপ্তানি করছে। বাংলাদেশে একই মানের চাল রপ্তানি করলে কোনোভাবেই ৫০০ ডলারের বেশি পড়বে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান চাল রপ্তানি করছে, তারা পাঁচ শতাংশ ভাঙা চাল রপ্তানির কথা বলে অপেক্ষাকৃত কম দামি (১৫ শতাংশ ভাঙা) চাল সরবরাহ করছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম সিন্ডিকেটের চেয়ারম্যান আবুল বশর প্রথম আলোকে জানান, গত তিন মাসে তাঁরা মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও পাকিস্তান থেকে প্রতি টন চাল ৪২০ থেকে ৪৩০ ডলারে কিনেছেন।
আরেক বড় আমদানিকারক এবং বাংলাদেশ চাল আমদানিকারক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তাঁরা ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে প্রতি টন চাল ৪২০ ডলার দরে এনেছেন। বর্তমানে ভিয়েতনাম থেকে ৪৬০ ডলার ও পাকিস্তান থেকে সেদ্ধ চাল ৪৮০ ডলার দরে কেনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ যখন বিশ্ববাজারে চাল পাচ্ছিল না, তখন থাইল্যান্ড সরকার চাল রপ্তানিতে রাজি হয়েছিল। এখন দাম কমে যাওয়ায় চাইলেই আমদানি চুক্তি বাতিল করা যাবে না। চুক্তি বাতিল করলে পরে থাইল্যান্ডের কাছ থেকে আর চাল পাওয়া যাবে না।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি খাত যদি অল্প দামে চাল আমদানি করতে পারে, তাহলেও সরকারেরও উচিত ছিল একই দামে চাল আনা। সাধারণত যে সময়ে আমদানি হবে, সেই সময়কার দাম ধরে রপ্তানি চুক্তি হয়ে থাকে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যত দামেই চুক্তি হোক না কেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা উচিত বর্তমান দরেই চাল সরবরাহ করতে।
সরবরাহকারী কারা: ১৬ এপ্রিল থাইল্যান্ড থেকে কেনা চালের জাহাজ বাংলাদেশের পথে রওনা হবে। এই চাল সরবরাহ করছে থাইল্যান্ডভিত্তিক এশিয়া গোল্ডেন রাইস কো., ক্যাপিটাল রাইস কোম্পানি, চাইয়াপর্ন রাইস কো. ও কামোলজি কো.।
খাদ্য বিভাগ দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করছে। এই চাল সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে চাইয়াপর্ন রাইস কো.। থাইল্যান্ড সরকারের মাধ্যমে এই কোম্পানি ৫৮০ ডলারে চাল সরবরাহ করলেও তারা সরাসরি ৫০৭ ডলারে সরবরাহ করছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেনের তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় চাইয়াপর্ন ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার মূল্যে চাল, চিনি ও সবজি সরবরাহ করে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের একটি দলের অনুসন্ধানে এর প্রমাণ মেলে।
২০০২ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা কোয়ালিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের ‘সাদ্দাম ও তাঁর পুত্রদের অর্থ উপার্জনের উৎস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চাইয়াপর্ন তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ইরাকে খাদ্য বিক্রি করে। খাদ্য সরবরাহের কাজ পেতে কোম্পানিটি সাদ্দাম ও তাঁর পুত্রদের ঘুষ দেয়। এ ছাড়া নাইজেরিয়াতেও ঘুষের বিনিময়ে চাল সরবরাহের আদেশ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ দাম বাড়াচ্ছে: চালের বাজার চড়া করার পেছনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে দায়ী করছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ দুই লাখ টন আমদানি বাড়িয়ে মোট আট লাখ টন চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে চাল রপ্তানিকারক প্রধান দেশ হচ্ছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। এই দুটি দেশ থেকে বাংলাদেশ মূলত ২৫ শতাংশ ভাঙা চাল আমদানি করে থাকে।
এফএও, ইউএসডিএ ও রাইস অনলাইনে চালের বাজার পর্যবেক্ষণবিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে চালের দাম কমতে থাকে। থাইল্যান্ড বিশ্ববাজারে পাঁচ শতাংশ ভাঙা আতপ চালের দাম ফেব্রুয়ারির শেষ দিকের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কমে ৫০২ থেকে ৫১৯ ডলারে বিক্রি শুরু করে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম একই চাল ফেব্রুয়ারির চেয়ে তিন শতাংশ কমিয়ে ৪৬০ ডলারে বিক্রি করছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক থেকে গত ৫ এপ্রিল প্রকাশিত গ্রেইন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বতর্মানে আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ডের চেয়ে ভিয়েতনামের চালের মূল্য প্রতি টনে ২০ থেকে ৩০ ডলার বেশি। গত সপ্তাহে এই পার্থক্য ছিল ৫০ ডলার। গত ২৮ মার্চ থাইল্যান্ডের কাছ থেকে বাংলাদেশ দুই লাখ টন চাল আমদানি চুক্তির পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়।
পাঠকের মন্তব্য
Abdullah al-mamun. রংপুর।
২০১১.০৪.১২ ০১:৫৪
বেসরকারী আমদানিকারকরা যদি কম মুল্য দিয়ে চাল আমদানি করতে পারে তবে সরকার কেন পারবেনা।এখানে কোন গোষ্ঠিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বেশি দাম ধরে চাল কেনা হচ্ছে।এই চুক্তি বাতিল করে বর্তমান দামে চাল আমদানি করা উচিত।
mahfujul islam
২০১১.০৪.১২ ০২:১০
খালি চুরি আর চুরি...
abdul matin
২০১১.০৪.১২ ০২:১২
this is Character of awamileage
jakir hussain
২০১১.০৪.১২ ০৩:২২
৩৯০ কোটি টাকা বেশী দিয়ে বিদেশ থেকে চাল কেনো কেনা হছ্বে আমরা কি তা জানতে পারি ? আর ৩৯০ কোটি টাকা কার পকেটে যাবে তা আমাদের জানার দরকার নেই। কারন আমরা তা ভালো করেই জানি।
Deshi
২০১১.০৪.১২ ০৩:৩৫
Ofcourse it will expensive than in market or private links. Because, all exporter already know it very clearly that, BD Ministry are corrupted & take the BIG amount as interest in their own pocket!
Kulsum al-nazrul
২০১১.০৪.১২ ০৩:৫৬
জনগনের অর্থ অপচয় করে জনসেবা।
ahmedmahfuge
২০১১.০৪.১২ ০৫:১৩
corruption.......
salahuddin shamsuddin
২০১১.০৪.১২ ০৬:১৫
Thats normal.Why making noise about it?The gov.is making under ground money from the deal....:D
razu
২০১১.০৪.১২ ০৭:১৭
টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গা চাল?????????
Afjal
২০১১.০৪.১২ ০৭:৪২
Now, I have the same demand, I want Food Minister resignation which Jubo League demand. We don't want to seed another Tareq Zia.
Faizul Islam
২০১১.০৪.১২ ০৮:৫০
খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক অবশ্য প্রধানমন্ত্রী কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে - 'চালের দাম বৃদ্ধির জবাব বিএনপি কে দিতে হবে।' কেন তার নমুনা দেখলাম। তদন্ত হওয়া দরকার।
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-12/news/146097
0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/