শেয়ারবাজার তদন্ত প্রতিবেদন
৩ মন্তব্য
সরকার প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সুযোগ নিচ্ছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা, লক্ষ্য তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানকে হেয় করা
শেয়ারবাজারের কারসাজির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একজোট হয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনটি বাতিল করার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সরকার প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সক্রিয় হওয়ার সুযোগ ও সময় পাচ্ছেন বলে সূত্র জানায়।
গত ৭ এপ্রিল কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেনি। প্রতিবেদনে অনেকগুলো সুপারিশ থাকলেও এখনো এর কোনোটিরই বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেদনের কিছু বিষয়ে পুনঃ তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত প্রতিবেদনেও কিছু বিষয়ে আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে নানা চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান। তিনি মনে করেন, সবার দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বাজার কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো ও কমানোর অনেকগুলো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁদের নামও প্রতিবেদনে রয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, গত দুই বছরে শেয়ারবাজারকে কেন্দ্র করে যা যা হয়েছে, সবই রয়েছে প্রতিবেদনে। কমিটিও এসব ঘটনাকে অনৈতিক আখ্যা দিয়েছে। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি)। কমিটি এসইসির চেয়ারম্যান ও দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অপসারণ করার সুপারিশ করেছে।
এই সুযোগটিই নিচ্ছেন কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। সবকিছুই এসইসির অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রচার করছেন এবং প্রতিবেদনটি বাতিল করানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাঁদের সহযোগী হয়েছেন এসইসির একশ্রেণীর কর্মকর্তা। এসব কর্মকর্তা আগেও এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে নানাভাবে কারসাজিতে সহায়তা করেছেন। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এখন তাঁরা আবারও একজোট হয়েছেন। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই গোষ্ঠী ঠিকই বিপুল পরিমাণ লাভ করেছে।
সূত্র জানায়, বাজার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মূল লক্ষ্য তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। নানা ধরনের অপপ্রচার ও চরিত্র হননের মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করাই তাঁদের উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যেই এ কাজটি শুরু করা হয়েছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে নানাভাবে প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনটি যাতে প্রকাশ না করা হয়, সে জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এবং তাঁদের সহযোগীদের বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, যেসব গণমাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে, তার মালিকানার সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জড়িত। নিজেদের স্বার্থরক্ষায় নিজস্ব প্রচারমাধ্যমগুলোকে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ অপপ্রচার সম্বন্ধে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্তদের কেবল সামরিক আইনে বিচার সম্ভব—এ জাতীয় কথা তিনি বলেননি। বরং তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, সাধারণত গণতান্ত্রিক দেশের যে বিচারব্যবস্থা, সেখানে অভিযোগ দাখিল করতে হলে শক্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হয়। তা না হলে বিচারিক প্রক্রিয়া থেকে ফল পাওয়া যায় না। মামলায় জেতা মুশকিল হয়ে যায়। সামরিক শাসনে সেটা হয় না। সামরিক শাসনে তথ্য-প্রমাণ লাগে না, একটা শাস্তি দিয়ে দেওয়া যায়।’
তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব ্ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী। এর বাইরে আরও প্রায় ৪০ জনের নাম থাকলেও তাঁদের পরিচয় প্রতিবেদনে জানানো হয়নি। সূত্র জানায়, এঁদের বড় অংশই প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য। এঁদের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমানের ভাতিজা আরিফুর রহমানের নামে বিপুল অঙ্কের শেয়ার লেনদেনের বিবরণ প্রতিবেদনে রয়েছে। আবার চট্টগ্রামের জাহাজভাঙা শিল্পের একজন বড় ব্যবসায়ীর কলেজপড়ুয়া মেয়ের নামে কয়েক শ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্যও প্রতিবেদনে রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা অনেকগুলো অনৈতিক ঘটনার সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন একাধিক কোম্পানি রয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহের তালিকায় ছিলেন ইমতিয়াজ হোসেন, খোরশেদ আলম, সালমান এফ রহমান, এনায়েতুর রহিম, রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী প্রমুখ। বর্তমান তদন্তে এঁদের মধ্যে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক মতামত এসেছে এবং কিছু তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। এসইসিকে প্রভাবিত করতে দুজনই সক্রিয় ছিলেন বলে অনেকেরই ধারণা। এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের নিয়োগ এবং সদস্য মনসুর আলমের পুনর্নিয়োগে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের তদবির ও সমর্থন ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস। বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের অস্বচ্ছ ঘটনাটির তদবিরে সালমান এফ রহমান নিজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ধরনা দিয়েছেন। জিএমজি ও ইউনিক হোটেল প্রভৃতি ঘটনায় সালমান রহমান সম্পৃক্ত রয়েছেন। এগুলোও অস্বচ্ছ। এসইসি পরিচালনায় দুজনেরই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ছিল, এ কারণে সাধারণ্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কমিটি সুপারিশ করে বলেছে, পুঁজিবাজার লেনদেন ও পরিচালনায় সালমান ও রকিবুর রহমানের প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। ‘মার্কেট প্লেয়াররা’ এসইসির ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হলে এসইসি অকার্যকর হয়ে থাকবে, আবারও বাজারে বিপর্যয় ঘটবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে বলেন, কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন এবং তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চমহলে তদবির শুরু করেছেন। সরকার যদি এসব তদবিরে সমর্থন দেয়, তাহলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে না। তিনি আরও বলেন, এই গ্রুপটি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রয়োজনে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে শেয়ারবাজারের পতন ঘটাতেও সক্রিয় থাকবে। ডিএসইর অনেক সদস্যকেও তারা পাশে পাবে। কেননা, তদন্ত কমিটি স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করতে সুপারিশ করেছে। এ নিয়েও স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিরোধিতা রয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির জন্য এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবার একটি কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এবারও ব্যবস্থা না নিলে আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ এবং প্রয়োজনমতো আরও অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দোষীদের এই বার্তা দিতে হবে যে, অন্যায় করলে পার পাওয়া যাবে না।
তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়ন দূরের কথা, বিবেচিত হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো। বর্তমান কমিটি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উল্লেখযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করেছে, দুর্নীতি-অনিয়ম সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে, নমুনা পরিদর্শন করেছে এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। এসবের যুক্তিযুক্ত পরিণতি থাকা উচিত।
সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে অর্থমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিতে পারেন। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে। গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও সচিবালয়ে দিনভর কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পাঠকের মন্তব্য
Ahmedul Bari
২০১১.০৪.১৭ ০৩:৫৬
এই সমস্ত কুলাঙ্গারদের ( রাষ্ট্রের চাইতে শক্তিশালী ! ) হয় জনগনের হাতে তুলে দিন অথবা ক্রস-ফায়ারে দিয়ে দিন , আর কোনটাই না পারলে পদত্যাগ করুন, জনগনই এদেরকে শক্তিহীন করে ছাড়বে আর আপনাদের কাপুরুষতার উপযুক্ত জবাব দিবে ৷
md arifur
২০১১.০৪.১৭ ০৪:৪৬
We have nothing to say.Where we should go for justice?, does anybody know that? god bless Bangladesh.
৩ মন্তব্য
সরকার প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সুযোগ নিচ্ছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা, লক্ষ্য তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানকে হেয় করা
শেয়ারবাজারের কারসাজির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একজোট হয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনটি বাতিল করার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সরকার প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সক্রিয় হওয়ার সুযোগ ও সময় পাচ্ছেন বলে সূত্র জানায়।
গত ৭ এপ্রিল কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেনি। প্রতিবেদনে অনেকগুলো সুপারিশ থাকলেও এখনো এর কোনোটিরই বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেদনের কিছু বিষয়ে পুনঃ তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত প্রতিবেদনেও কিছু বিষয়ে আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে নানা চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান। তিনি মনে করেন, সবার দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বাজার কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো ও কমানোর অনেকগুলো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁদের নামও প্রতিবেদনে রয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, গত দুই বছরে শেয়ারবাজারকে কেন্দ্র করে যা যা হয়েছে, সবই রয়েছে প্রতিবেদনে। কমিটিও এসব ঘটনাকে অনৈতিক আখ্যা দিয়েছে। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি)। কমিটি এসইসির চেয়ারম্যান ও দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অপসারণ করার সুপারিশ করেছে।
এই সুযোগটিই নিচ্ছেন কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। সবকিছুই এসইসির অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রচার করছেন এবং প্রতিবেদনটি বাতিল করানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাঁদের সহযোগী হয়েছেন এসইসির একশ্রেণীর কর্মকর্তা। এসব কর্মকর্তা আগেও এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে নানাভাবে কারসাজিতে সহায়তা করেছেন। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এখন তাঁরা আবারও একজোট হয়েছেন। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই গোষ্ঠী ঠিকই বিপুল পরিমাণ লাভ করেছে।
সূত্র জানায়, বাজার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মূল লক্ষ্য তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। নানা ধরনের অপপ্রচার ও চরিত্র হননের মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করাই তাঁদের উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যেই এ কাজটি শুরু করা হয়েছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে নানাভাবে প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনটি যাতে প্রকাশ না করা হয়, সে জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এবং তাঁদের সহযোগীদের বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, যেসব গণমাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে, তার মালিকানার সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জড়িত। নিজেদের স্বার্থরক্ষায় নিজস্ব প্রচারমাধ্যমগুলোকে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ অপপ্রচার সম্বন্ধে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্তদের কেবল সামরিক আইনে বিচার সম্ভব—এ জাতীয় কথা তিনি বলেননি। বরং তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, সাধারণত গণতান্ত্রিক দেশের যে বিচারব্যবস্থা, সেখানে অভিযোগ দাখিল করতে হলে শক্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হয়। তা না হলে বিচারিক প্রক্রিয়া থেকে ফল পাওয়া যায় না। মামলায় জেতা মুশকিল হয়ে যায়। সামরিক শাসনে সেটা হয় না। সামরিক শাসনে তথ্য-প্রমাণ লাগে না, একটা শাস্তি দিয়ে দেওয়া যায়।’
তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব ্ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী। এর বাইরে আরও প্রায় ৪০ জনের নাম থাকলেও তাঁদের পরিচয় প্রতিবেদনে জানানো হয়নি। সূত্র জানায়, এঁদের বড় অংশই প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য। এঁদের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমানের ভাতিজা আরিফুর রহমানের নামে বিপুল অঙ্কের শেয়ার লেনদেনের বিবরণ প্রতিবেদনে রয়েছে। আবার চট্টগ্রামের জাহাজভাঙা শিল্পের একজন বড় ব্যবসায়ীর কলেজপড়ুয়া মেয়ের নামে কয়েক শ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্যও প্রতিবেদনে রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা অনেকগুলো অনৈতিক ঘটনার সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন একাধিক কোম্পানি রয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহের তালিকায় ছিলেন ইমতিয়াজ হোসেন, খোরশেদ আলম, সালমান এফ রহমান, এনায়েতুর রহিম, রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী প্রমুখ। বর্তমান তদন্তে এঁদের মধ্যে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক মতামত এসেছে এবং কিছু তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। এসইসিকে প্রভাবিত করতে দুজনই সক্রিয় ছিলেন বলে অনেকেরই ধারণা। এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের নিয়োগ এবং সদস্য মনসুর আলমের পুনর্নিয়োগে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের তদবির ও সমর্থন ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস। বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের অস্বচ্ছ ঘটনাটির তদবিরে সালমান এফ রহমান নিজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ধরনা দিয়েছেন। জিএমজি ও ইউনিক হোটেল প্রভৃতি ঘটনায় সালমান রহমান সম্পৃক্ত রয়েছেন। এগুলোও অস্বচ্ছ। এসইসি পরিচালনায় দুজনেরই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ছিল, এ কারণে সাধারণ্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কমিটি সুপারিশ করে বলেছে, পুঁজিবাজার লেনদেন ও পরিচালনায় সালমান ও রকিবুর রহমানের প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। ‘মার্কেট প্লেয়াররা’ এসইসির ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হলে এসইসি অকার্যকর হয়ে থাকবে, আবারও বাজারে বিপর্যয় ঘটবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে বলেন, কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন এবং তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চমহলে তদবির শুরু করেছেন। সরকার যদি এসব তদবিরে সমর্থন দেয়, তাহলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে না। তিনি আরও বলেন, এই গ্রুপটি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রয়োজনে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে শেয়ারবাজারের পতন ঘটাতেও সক্রিয় থাকবে। ডিএসইর অনেক সদস্যকেও তারা পাশে পাবে। কেননা, তদন্ত কমিটি স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করতে সুপারিশ করেছে। এ নিয়েও স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিরোধিতা রয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির জন্য এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবার একটি কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এবারও ব্যবস্থা না নিলে আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ এবং প্রয়োজনমতো আরও অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দোষীদের এই বার্তা দিতে হবে যে, অন্যায় করলে পার পাওয়া যাবে না।
তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়ন দূরের কথা, বিবেচিত হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো। বর্তমান কমিটি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উল্লেখযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করেছে, দুর্নীতি-অনিয়ম সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে, নমুনা পরিদর্শন করেছে এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। এসবের যুক্তিযুক্ত পরিণতি থাকা উচিত।
সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে অর্থমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিতে পারেন। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে। গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও সচিবালয়ে দিনভর কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পাঠকের মন্তব্য
Ahmedul Bari
২০১১.০৪.১৭ ০৩:৫৬
এই সমস্ত কুলাঙ্গারদের ( রাষ্ট্রের চাইতে শক্তিশালী ! ) হয় জনগনের হাতে তুলে দিন অথবা ক্রস-ফায়ারে দিয়ে দিন , আর কোনটাই না পারলে পদত্যাগ করুন, জনগনই এদেরকে শক্তিহীন করে ছাড়বে আর আপনাদের কাপুরুষতার উপযুক্ত জবাব দিবে ৷
md arifur
২০১১.০৪.১৭ ০৪:৪৬
We have nothing to say.Where we should go for justice?, does anybody know that? god bless Bangladesh.
0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/