এবার অভিনব কৌশল, নতুন উদ্ভাবনী ও লোভের ফাঁদ তৈরি করে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ঘটানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির সঙ্গে যোগসাজশে ডিএসই ও সিএসই সারা দেশে বাজারের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। রোড শো ও গণমাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে শেয়ারের দৈনন্দিন কেনাবেচাকে লোভনীয় করা হয়েছে।
আইপিওর আগে প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্ট বিক্রি, প্লেসমেন্টের কার্ব বাজার, প্রেফারেন্স শেয়ার, সরাসরি তালিকাভুক্তি, রিপিট আইপিও, কোম্পানি সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন, ঋণকে শেয়ারে রূপান্তর, বুক বিল্ডিং ইত্যাকার দেশের শেয়ারবাজারের জন্য নতুন ও অভিনব সব প্রস্তাব এনে প্রাথমিক বাজারকে অতি মূল্যায়িত করে এক দফা অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। আর সেকেন্ডারি বাজারে এই অতি মূল্যায়ন ধরে যোগসাজশ ও গোষ্ঠীবদ্ধ লেনদেন করে আরেক দফা মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
আর সর্বশেষ সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিসহ কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংকে সংরক্ষিত অমনিবাস হিসাব থেকে ৮৩০০ (ডিএসই) সূচকের সময় বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে বাজারে পতন ঘটানো হয়েছে। শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনকি অখ্যাত বিদেশি কোম্পানি ডেকে এনে তার প্রচারও চালানো হয়েছে। জেম গ্লোবাল নামের এই কোম্পানিও বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে উঠতি বাজারে ১৪২ শতাংশ মুনাফা করে।
শেয়ার কেলেঙ্কারির এসব কৌশলের নেপথ্যে ও সামনের সারিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন এসইসির সাবেক সদস্য সাহাবুব আলম, সরকারি দলের সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবাল, বিরোধী দল বিএনপির সাবেক সাংসদ মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং ছিয়ানব্বই সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান এবং ইয়াকুব আলী খোন্দকার, গোলাম মোস্তফা, রকিবুর রহমানের নিকটাত্মীয় আরিফুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন।
এর বাইরে আছে বেশ কয়েকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো এবং উল্লিখিত ব্যক্তিরা এক প্রকার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সঙ্গে যোগসাজশে ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রভাব বিস্তার করে দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের হাতের সঞ্চয় তুলে নিতে নানা ফন্দি করেছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত শেয়ারবাজার-বিষয়ক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ৭ এপ্রিল সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়ে ইব্রাহিম খালেদ গণমাধ্যমকে বলেন, শেয়ারবাজারে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িত থাকলেও তাঁরা মূলত ব্যবসায়ী। বাজারকেন্দ্রিক বড় অঙ্ক হাতিয়ে নিতেই তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করেছেন।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, এবারের পুঁজিবাজার ধস ছিয়ানব্বই সালের ধসের মতো নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এবং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত। ছিয়ানব্বইয়ের ধস ছিল সম্পূর্ণ সেকেন্ডারি বাজারের ঘটনা। কিন্তু এবারের মূল ঘটনা অনেকটা পর্দার অন্তরালে প্রাথমিক বাজারের কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত, যা এসইসির সমর্থন-সহায়তায় ইস্যুয়ার, ইস্যু-ম্যানেজার, ভ্যালুয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং প্লেসমেন্টধারীদের একটি শক্তিশালী চক্রের সিন্ডিকেশনের কুফল। বলা হয়েছে, আইপিও ইস্যুর আগে প্রিমিয়াম, বুক বিল্ডিং, প্লেসমেন্টের অপপ্রয়োগে যে বিশাল মূল্যস্ফীতির (শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি) চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, সে চাপেই সেকেন্ডারি বাজারে বা উন্মুক্ত পুঁজিবাজারে অতি মাত্রায় অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করেছিল। প্রাক-আইপিও মূল্য কেলেঙ্কারি রোধ করতে এসইসি ব্যর্থ না হলে সম্ভবত এবার বাজারে ধস হতো না।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম খালেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এসইসি যদি বিধিবিধানের আওতায় এই কারসাজি ঠেকাতে পারত, তাহলে এভাবে শেয়ারবাজারে বিপর্যয় হতো না।
সারা দেশে বাজারের বিস্তৃতি: ডিএসই ও সিএসই সারা দেশে ব্রোকারেজ হাউস ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বাজারে আকৃষ্ট করে। তারা রোড শো করে, গণমাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে বাজারে লোভের পরিবেশ তৈরি করেছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, যদিও সংগত কারণেই মনে হতে পারে যে অধিকসংখ্যক বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারে সম্পৃক্ত করা অর্থনীতির জন্য ভালো একটি পদক্ষেপ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং আর্থিক ঝুঁকি বহনের ক্ষমতা নিশ্চয়ই নজরে রাখতে হবে। উপরন্তু যেখানে স্টক মার্কেটে সংশ্লিষ্ট সবাই একবাক্যে বলে আসছে, বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কম, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ক্ষুদ্র, অপরিপক্ব, অ-তথ্যসমৃদ্ধ বিনিয়োগকারীকে বাজারে টেনে আনা সুচিন্তিত পদক্ষেপ নয়।
তদন্ত কমিটির কাছে প্রকাশ পেয়েছে যে গ্রাম পর্যায়ে নিম্নমাত্রায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে কর্মরত অথবা বিনিয়োগরত তাঁদের ভাই-বন্ধু-আত্মীয়র উৎসাহে বা প্ররোচনায় বিও হিসাব খুলে তাঁদের সাধ্যের অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। শেয়ারবাজারের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতিতে এ রকম স্বল্পসংখ্যক বিনিয়োগকারী লাভবানও হয়েছেন। তবে অধিকাংশই এখন উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতা রোধে বা নিয়ন্ত্রণে এসইসি লক্ষণীয় ভূমিকা পালন করেনি।
অন্য বিনিয়োগ অনাকর্ষণীয়: দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবের কারণে অনেক দিন ধরেই শিল্পবিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ে। এদিকে শিল্প-ব্যবসায় বিনিয়োগকে উৎসাহ জোগাতে কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের সুদহার কমে আসে। সরকারের কাছে বিনিয়োগ অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের ওপর করারোপ করা হয়, লভ্যাংশ কমিয়ে দেয় সরকার। তদন্ত কমিটি বলেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহও এ সময় বাড়ে। উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক সংসারে উদ্বৃত্ত আয় বেড়ে যায়। ব্যাংকেও প্রচুর পরিমাণে অলস অর্থ পড়ে থাকে। এ পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প বিনিয়োগ খাত খুঁজতে বাধ্য হয়। নজরে আসে শেয়ারবাজার। কিন্তু এদের কাছে ছিয়ানব্বইয়ের বাজার পতনের বিষয়টি অজ্ঞাত ও অনালোকিত থেকে যায়।
প্লেসমেন্টের কার্ব ব্যবসা: তদন্ত কমিটি বলেছে, স্টক মার্কেটের বাইরে এসইসির প্রত্যক্ষ সহায়তায়, সহযোগিতায় এবং সম্ভবত শীর্ষ নির্বাহীদের সংশ্লিষ্টতায় প্রাক-আইপিও পর্যায়ে যে মূল্য কারসাজি ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত, অনৈতিক এবং সুনির্দিষ্ট সিন্ডিকেশনের ফল। প্রকৃতপক্ষে এসইসির ছত্রচ্ছায়ায় একটি বেআইনি কার্ব বাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেখানে ডিম্যাট (শেয়ারের যান্ত্রিকী উপস্থাপন) তো দূরের কথা, কাগুজে শেয়ারও নয়, টোকেনের মাধ্যমে শেয়ার প্লেসমেন্ট ও প্লেসমেন্ট ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হয়েছে। যদিও এসইসির অনুমোদন ছাড়া শেয়ার ইস্যু ও বিক্রি আইনসিদ্ধ নয়, তবু সেটাই ঘটেছে।
তদন্ত কমিটি বলেছে, এসইসির শীর্ষ কর্মকর্তা, ডিএসই/সিএসইর সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্টজনদের এই প্লেসমেন্ট শেয়ার দিয়ে শুধু সিন্ডিকেট শক্তিশালী করা হয়নি, সমাজের উচ্চস্তরকে দুর্নীতির জীবাণু দ্বারা সংক্রমিতও করানো হয়েছে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া এই দুষ্টচক্র ভেদ করে পুঁজিবাজারে সুস্থতা আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ এসেছে, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৭০ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৪২৫ কোটি টাকায়। জিএমজি এয়ারলাইনসের ৬০ কোটি টাকার শেয়ার মৌখিক প্লেসমেন্টে বিক্রি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকায়। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের পাঁচ কোটি টাকার শেয়ার প্লেসমেন্টে বিক্রি হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এসটিএস হোল্ডিংয়ের শেয়ারপ্রতি আয় ১.৪৪ টাকা। ২০০৬ থেকে ’০৮ পর্যন্ত এটা ছিল লোকসানি কোম্পানি। অথচ বুক বিল্ডিংয়ে এর নির্দেশক মূল্য হয়েছে ১২৫ টাকা। এই ১২৫ টাকার শেয়ার মাত্র ১৫ টাকা করে কোম্পানি তাদের অর্ধেকের বেশি শেয়ার প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। কিন্তু কাদের কাছে বিক্রি করেছে, তা প্রকাশ করেনি। এসইসি তদন্তও করেনি, যথার্থতাও দেখেনি।
আইপিওতে নানা কারসাজি ও অতি মূল্যায়ন: তদন্ত কমিটি মূল্যায়ন করে বলেছে, প্রাক-আইপিওতে মূল্য কারসাজি ও এর ফলে আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি না ঘটানো হলে এবারের পুঁজিবাজারে ধস ঘটত না। তারা বলেছে, প্রথম পর্বে আলোচিত ব্যক্তি/সংস্থার সম্ভাব্য ভূমিকার তুলনায় প্রাক-আইপিও সিন্ডিকেটের ভূমিকা পর্বতপ্রমাণ।
তদন্ত প্রতিবেদনের এই পর্বে সাতটি কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাত্র দু-তিন মাসের জন্য অগ্রাধিকার বা প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়া হয়েছে। পিপলস লিজিং মাত্র এক মাসের জন্য অগ্রাধিকার শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। অগ্রাধিকার শেয়ারগুলো সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের সময় বাজারমূল্যের গড়ের চেয়ে ২৫ থেকে ৪৫ ভাগ ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রূপান্তরের আনুপাতিক হার এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে ইস্যু কোম্পানি বেশ কিছু প্রিমিয়াম (উপরি মূল্য) পায়। যেমন ১০ টাকার অগ্রাধিকার শেয়ার মেয়াদ শেষে তিনটি সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হয়েছে অর্থাৎ ১০: ৩ অনুপাত।
ব্যক্তি খাতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম মূল্যে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পাঁচটি কোম্পানি বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, এমজেএল ও এমআই সিমেন্ট অতি উচ্চ প্রিমিয়ামে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সে তুলনায় আরএকে সংযতভাবে গ্রহণযোগ্য প্রিমিয়ামে পুঁজি সংগ্রহ করেছে। একই কারণে আরএকের বাজারমূল্য সেভাবে না কমায় বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
রিপিট আইপিও ছেড়ে গোল্ডেনসন ১০ কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহ করেছে। শেয়ারের মূল্য প্রশ্নের সম্মুখীন মনে করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া বে-লিজিংয়ের আইপিওতে প্রিমিয়াম মূল্য ১৫০ টাকা, মেরিকোতে প্রিমিয়াম মূল্য ৮০ টাকা নেওয়ার ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছে তদন্ত কমিটি।
আবার লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ আদৌ আইপিওতে যেতে পারে কি না, সেটাই প্রশ্নবোধক মনে করে কমিটি। তার ওপর ২৪০ টাকা প্রিমিয়াম দাবি করে আইপিও আবেদনে। ইউনিক হোটেলের ১৮৫ টাকা প্রিমিয়াম দাবি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিটি।
মিউচুয়াল ফান্ডের প্লেসমেন্ট: মিউচুয়াল ফান্ডেরও প্লেসমেন্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্লেসমেন্টের ওপর লকইনও ছিল না।
সেকেন্ডারি বাজারে কারসাজি: কমিটির প্রতিবেদনে সেকেন্ডারি বাজারে মূল্য কারসাজির তথ্য রয়েছে। কিছু লেনদেনকারী নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা করে দর বাড়িয়েছেন। আর মূল্যবৃদ্ধির একপর্যায়ে তাঁরা বেরিয়ে গেছেন। প্রতিবেদনে কয়েকজনের এমন লেনদেনের তথ্য দিয়েছে। সৈয়দ সিরাজউদ্দৌলা এবং সহযোগীরা রাশেদা আক্তার মায়া (সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী), হাবিবুর রহমান (সিরাজদ্দৌলার অ্যাকাউন্ট শনাক্তকারী)। ইয়াকুব আলী খোন্দকার এবং সহযোগীরা সারাহ খন্দকার (ইয়াকুবের কন্যা) ও ইয়াসিন খোন্দকার (ইয়াকুবের ভাই) ইত্যাদি। এঁদের দুজনের নাম এসেছে বারবার।
তদন্ত প্রতিবেদনে নানাভাবে নাম আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁর বক্তব্য পাঠাবেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি তাঁর কোম্পানির যে কেস স্টাডি দিয়েছে, তাতে তাঁকে কোনোভাবেই অভিযুক্ত বা অসৎ, অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বলেনি। তিনি বরং বলেছেন, মুনাফা তুলে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে তাঁরা তো সব শেয়ারই বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু শুধু বোনাসের দুই হাজার ৩০০ শেয়ার বিক্রি করেছেন।
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-12/news/146098
আইপিওর আগে প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্ট বিক্রি, প্লেসমেন্টের কার্ব বাজার, প্রেফারেন্স শেয়ার, সরাসরি তালিকাভুক্তি, রিপিট আইপিও, কোম্পানি সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন, ঋণকে শেয়ারে রূপান্তর, বুক বিল্ডিং ইত্যাকার দেশের শেয়ারবাজারের জন্য নতুন ও অভিনব সব প্রস্তাব এনে প্রাথমিক বাজারকে অতি মূল্যায়িত করে এক দফা অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। আর সেকেন্ডারি বাজারে এই অতি মূল্যায়ন ধরে যোগসাজশ ও গোষ্ঠীবদ্ধ লেনদেন করে আরেক দফা মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
আর সর্বশেষ সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিসহ কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংকে সংরক্ষিত অমনিবাস হিসাব থেকে ৮৩০০ (ডিএসই) সূচকের সময় বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে বাজারে পতন ঘটানো হয়েছে। শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনকি অখ্যাত বিদেশি কোম্পানি ডেকে এনে তার প্রচারও চালানো হয়েছে। জেম গ্লোবাল নামের এই কোম্পানিও বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে উঠতি বাজারে ১৪২ শতাংশ মুনাফা করে।
শেয়ার কেলেঙ্কারির এসব কৌশলের নেপথ্যে ও সামনের সারিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন এসইসির সাবেক সদস্য সাহাবুব আলম, সরকারি দলের সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবাল, বিরোধী দল বিএনপির সাবেক সাংসদ মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং ছিয়ানব্বই সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান এবং ইয়াকুব আলী খোন্দকার, গোলাম মোস্তফা, রকিবুর রহমানের নিকটাত্মীয় আরিফুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন।
এর বাইরে আছে বেশ কয়েকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো এবং উল্লিখিত ব্যক্তিরা এক প্রকার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সঙ্গে যোগসাজশে ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রভাব বিস্তার করে দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের হাতের সঞ্চয় তুলে নিতে নানা ফন্দি করেছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত শেয়ারবাজার-বিষয়ক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ৭ এপ্রিল সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়ে ইব্রাহিম খালেদ গণমাধ্যমকে বলেন, শেয়ারবাজারে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িত থাকলেও তাঁরা মূলত ব্যবসায়ী। বাজারকেন্দ্রিক বড় অঙ্ক হাতিয়ে নিতেই তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করেছেন।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, এবারের পুঁজিবাজার ধস ছিয়ানব্বই সালের ধসের মতো নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এবং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত। ছিয়ানব্বইয়ের ধস ছিল সম্পূর্ণ সেকেন্ডারি বাজারের ঘটনা। কিন্তু এবারের মূল ঘটনা অনেকটা পর্দার অন্তরালে প্রাথমিক বাজারের কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত, যা এসইসির সমর্থন-সহায়তায় ইস্যুয়ার, ইস্যু-ম্যানেজার, ভ্যালুয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং প্লেসমেন্টধারীদের একটি শক্তিশালী চক্রের সিন্ডিকেশনের কুফল। বলা হয়েছে, আইপিও ইস্যুর আগে প্রিমিয়াম, বুক বিল্ডিং, প্লেসমেন্টের অপপ্রয়োগে যে বিশাল মূল্যস্ফীতির (শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি) চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, সে চাপেই সেকেন্ডারি বাজারে বা উন্মুক্ত পুঁজিবাজারে অতি মাত্রায় অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করেছিল। প্রাক-আইপিও মূল্য কেলেঙ্কারি রোধ করতে এসইসি ব্যর্থ না হলে সম্ভবত এবার বাজারে ধস হতো না।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম খালেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এসইসি যদি বিধিবিধানের আওতায় এই কারসাজি ঠেকাতে পারত, তাহলে এভাবে শেয়ারবাজারে বিপর্যয় হতো না।
সারা দেশে বাজারের বিস্তৃতি: ডিএসই ও সিএসই সারা দেশে ব্রোকারেজ হাউস ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বাজারে আকৃষ্ট করে। তারা রোড শো করে, গণমাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে বাজারে লোভের পরিবেশ তৈরি করেছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, যদিও সংগত কারণেই মনে হতে পারে যে অধিকসংখ্যক বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারে সম্পৃক্ত করা অর্থনীতির জন্য ভালো একটি পদক্ষেপ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং আর্থিক ঝুঁকি বহনের ক্ষমতা নিশ্চয়ই নজরে রাখতে হবে। উপরন্তু যেখানে স্টক মার্কেটে সংশ্লিষ্ট সবাই একবাক্যে বলে আসছে, বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কম, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ক্ষুদ্র, অপরিপক্ব, অ-তথ্যসমৃদ্ধ বিনিয়োগকারীকে বাজারে টেনে আনা সুচিন্তিত পদক্ষেপ নয়।
তদন্ত কমিটির কাছে প্রকাশ পেয়েছে যে গ্রাম পর্যায়ে নিম্নমাত্রায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে কর্মরত অথবা বিনিয়োগরত তাঁদের ভাই-বন্ধু-আত্মীয়র উৎসাহে বা প্ররোচনায় বিও হিসাব খুলে তাঁদের সাধ্যের অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। শেয়ারবাজারের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতিতে এ রকম স্বল্পসংখ্যক বিনিয়োগকারী লাভবানও হয়েছেন। তবে অধিকাংশই এখন উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতা রোধে বা নিয়ন্ত্রণে এসইসি লক্ষণীয় ভূমিকা পালন করেনি।
অন্য বিনিয়োগ অনাকর্ষণীয়: দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবের কারণে অনেক দিন ধরেই শিল্পবিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ে। এদিকে শিল্প-ব্যবসায় বিনিয়োগকে উৎসাহ জোগাতে কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের সুদহার কমে আসে। সরকারের কাছে বিনিয়োগ অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের ওপর করারোপ করা হয়, লভ্যাংশ কমিয়ে দেয় সরকার। তদন্ত কমিটি বলেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহও এ সময় বাড়ে। উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক সংসারে উদ্বৃত্ত আয় বেড়ে যায়। ব্যাংকেও প্রচুর পরিমাণে অলস অর্থ পড়ে থাকে। এ পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প বিনিয়োগ খাত খুঁজতে বাধ্য হয়। নজরে আসে শেয়ারবাজার। কিন্তু এদের কাছে ছিয়ানব্বইয়ের বাজার পতনের বিষয়টি অজ্ঞাত ও অনালোকিত থেকে যায়।
প্লেসমেন্টের কার্ব ব্যবসা: তদন্ত কমিটি বলেছে, স্টক মার্কেটের বাইরে এসইসির প্রত্যক্ষ সহায়তায়, সহযোগিতায় এবং সম্ভবত শীর্ষ নির্বাহীদের সংশ্লিষ্টতায় প্রাক-আইপিও পর্যায়ে যে মূল্য কারসাজি ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত, অনৈতিক এবং সুনির্দিষ্ট সিন্ডিকেশনের ফল। প্রকৃতপক্ষে এসইসির ছত্রচ্ছায়ায় একটি বেআইনি কার্ব বাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেখানে ডিম্যাট (শেয়ারের যান্ত্রিকী উপস্থাপন) তো দূরের কথা, কাগুজে শেয়ারও নয়, টোকেনের মাধ্যমে শেয়ার প্লেসমেন্ট ও প্লেসমেন্ট ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হয়েছে। যদিও এসইসির অনুমোদন ছাড়া শেয়ার ইস্যু ও বিক্রি আইনসিদ্ধ নয়, তবু সেটাই ঘটেছে।
তদন্ত কমিটি বলেছে, এসইসির শীর্ষ কর্মকর্তা, ডিএসই/সিএসইর সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্টজনদের এই প্লেসমেন্ট শেয়ার দিয়ে শুধু সিন্ডিকেট শক্তিশালী করা হয়নি, সমাজের উচ্চস্তরকে দুর্নীতির জীবাণু দ্বারা সংক্রমিতও করানো হয়েছে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া এই দুষ্টচক্র ভেদ করে পুঁজিবাজারে সুস্থতা আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ এসেছে, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৭০ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৪২৫ কোটি টাকায়। জিএমজি এয়ারলাইনসের ৬০ কোটি টাকার শেয়ার মৌখিক প্লেসমেন্টে বিক্রি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকায়। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের পাঁচ কোটি টাকার শেয়ার প্লেসমেন্টে বিক্রি হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এসটিএস হোল্ডিংয়ের শেয়ারপ্রতি আয় ১.৪৪ টাকা। ২০০৬ থেকে ’০৮ পর্যন্ত এটা ছিল লোকসানি কোম্পানি। অথচ বুক বিল্ডিংয়ে এর নির্দেশক মূল্য হয়েছে ১২৫ টাকা। এই ১২৫ টাকার শেয়ার মাত্র ১৫ টাকা করে কোম্পানি তাদের অর্ধেকের বেশি শেয়ার প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। কিন্তু কাদের কাছে বিক্রি করেছে, তা প্রকাশ করেনি। এসইসি তদন্তও করেনি, যথার্থতাও দেখেনি।
আইপিওতে নানা কারসাজি ও অতি মূল্যায়ন: তদন্ত কমিটি মূল্যায়ন করে বলেছে, প্রাক-আইপিওতে মূল্য কারসাজি ও এর ফলে আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি না ঘটানো হলে এবারের পুঁজিবাজারে ধস ঘটত না। তারা বলেছে, প্রথম পর্বে আলোচিত ব্যক্তি/সংস্থার সম্ভাব্য ভূমিকার তুলনায় প্রাক-আইপিও সিন্ডিকেটের ভূমিকা পর্বতপ্রমাণ।
তদন্ত প্রতিবেদনের এই পর্বে সাতটি কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাত্র দু-তিন মাসের জন্য অগ্রাধিকার বা প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়া হয়েছে। পিপলস লিজিং মাত্র এক মাসের জন্য অগ্রাধিকার শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। অগ্রাধিকার শেয়ারগুলো সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের সময় বাজারমূল্যের গড়ের চেয়ে ২৫ থেকে ৪৫ ভাগ ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রূপান্তরের আনুপাতিক হার এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে ইস্যু কোম্পানি বেশ কিছু প্রিমিয়াম (উপরি মূল্য) পায়। যেমন ১০ টাকার অগ্রাধিকার শেয়ার মেয়াদ শেষে তিনটি সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হয়েছে অর্থাৎ ১০: ৩ অনুপাত।
ব্যক্তি খাতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম মূল্যে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পাঁচটি কোম্পানি বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, এমজেএল ও এমআই সিমেন্ট অতি উচ্চ প্রিমিয়ামে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সে তুলনায় আরএকে সংযতভাবে গ্রহণযোগ্য প্রিমিয়ামে পুঁজি সংগ্রহ করেছে। একই কারণে আরএকের বাজারমূল্য সেভাবে না কমায় বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
রিপিট আইপিও ছেড়ে গোল্ডেনসন ১০ কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহ করেছে। শেয়ারের মূল্য প্রশ্নের সম্মুখীন মনে করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া বে-লিজিংয়ের আইপিওতে প্রিমিয়াম মূল্য ১৫০ টাকা, মেরিকোতে প্রিমিয়াম মূল্য ৮০ টাকা নেওয়ার ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছে তদন্ত কমিটি।
আবার লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ আদৌ আইপিওতে যেতে পারে কি না, সেটাই প্রশ্নবোধক মনে করে কমিটি। তার ওপর ২৪০ টাকা প্রিমিয়াম দাবি করে আইপিও আবেদনে। ইউনিক হোটেলের ১৮৫ টাকা প্রিমিয়াম দাবি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিটি।
মিউচুয়াল ফান্ডের প্লেসমেন্ট: মিউচুয়াল ফান্ডেরও প্লেসমেন্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্লেসমেন্টের ওপর লকইনও ছিল না।
সেকেন্ডারি বাজারে কারসাজি: কমিটির প্রতিবেদনে সেকেন্ডারি বাজারে মূল্য কারসাজির তথ্য রয়েছে। কিছু লেনদেনকারী নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা করে দর বাড়িয়েছেন। আর মূল্যবৃদ্ধির একপর্যায়ে তাঁরা বেরিয়ে গেছেন। প্রতিবেদনে কয়েকজনের এমন লেনদেনের তথ্য দিয়েছে। সৈয়দ সিরাজউদ্দৌলা এবং সহযোগীরা রাশেদা আক্তার মায়া (সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী), হাবিবুর রহমান (সিরাজদ্দৌলার অ্যাকাউন্ট শনাক্তকারী)। ইয়াকুব আলী খোন্দকার এবং সহযোগীরা সারাহ খন্দকার (ইয়াকুবের কন্যা) ও ইয়াসিন খোন্দকার (ইয়াকুবের ভাই) ইত্যাদি। এঁদের দুজনের নাম এসেছে বারবার।
তদন্ত প্রতিবেদনে নানাভাবে নাম আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁর বক্তব্য পাঠাবেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি তাঁর কোম্পানির যে কেস স্টাডি দিয়েছে, তাতে তাঁকে কোনোভাবেই অভিযুক্ত বা অসৎ, অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বলেনি। তিনি বরং বলেছেন, মুনাফা তুলে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে তাঁরা তো সব শেয়ারই বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু শুধু বোনাসের দুই হাজার ৩০০ শেয়ার বিক্রি করেছেন।
News Source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-12/news/146098
0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/