(আন্না হাজারে ভারতীয় অহিংস সংগ্রামী। ১৯৭৫ সালে নিজ গ্রাম র্যালেগাঁওয়ে সুখী-সমৃদ্ধ আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি মহারাষ্ট্রে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে সিটিজেন অম্বুডসম্যান বা লোকপাল নিয়োগের বিল পাস করার দাবিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে অনশন শুরু করেন। আন্না হাজারের আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন পেলে ভারত সরকার দাবি মেনে নিয়ে লোকপাল বিলের খসড়া তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। বাংলাদেশের সংবিধানেও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও আজ অবধি কোনো সরকারই তা বাস্তবায়ন করেনি। ঘটনাটির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে গত শনিবার অনশন ভাঙার সময়ে দিল্লির যন্তর মন্তর চত্বরে দেওয়া আন্না হাজারের ভাষণটির ভাষান্তর প্রকাশ করা হলো)
আজ আমি আমার অনশন ভাঙলাম। একটা নোটিশ জারির মাধ্যমে সরকার আমাদের দাবি পূরণ করার ঘোষণা দিয়েছে। গত পাঁচ দিনের বিক্ষোভের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমি লক্ষ করেছি। সব ধর্মের, জাতের, বর্ণের ভাইয়েরা-বোনেরা একসঙ্গে এসে দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা জানিয়েছে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আবারও আমরা দুনিয়ার সামনে দেখালাম যে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
স্লোগানের মধ্যে আমরা ভগত সিংয়ের নাম শুনেছি, শুনেছি রাজগুরুর নাম। এসব স্লোগান দিয়েই তাঁরা ব্রিটিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। আজ আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশের বাদামি সাহেবদের নির্ঘুম রাত উপহার দিয়েছি। এটাও আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আমাদের এই প্রতিবাদের খবর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, মিডিয়া হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাঁরা দেখিয়েছেন, দেশের জন্য তাঁরা কী করতে পারেন। আজ আমরা সেই চতুর্থ স্তম্ভের শক্তি ও ক্ষমতা দেখতে পেয়েছি।
যেসব ভাইবোন আমার সঙ্গে যন্তর-মন্তরে বসে অনশন করছিলেন, আজ তাঁরাও অনশন ভেঙেছেন। আমি তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। এই দাবিতে দেশের অন্য জায়গায় যাঁরা সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমি গিয়ে গিয়ে দেখা করব।
এই প্রতিবাদে তরুণদের অংশগ্রহণ এক জোরালো আশার আলোকরশ্মির মতো। দেশের সব তরুণ এই দাবিতে উঠে দাঁড়িয়েছে। তরুণদের শক্তিই একটি দেশের শক্তি। যারা দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে, আমি সেসব তরুণকেও ধন্যবাদ জানাই। দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তারা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তারা সবাই জীবনশৈলী চর্চার অংশ। এই মুহূর্তে আমি পণ্ডিত রবিশঙ্করের বার্তা পেলাম। জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে যে তরুণেরা এখানে এসেছে, তিনি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই প্রতিবাদে যাঁরা তাঁদের মন, শরীর এবং আত্মা দিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই। আমি অস্মিতা থিয়েটার গ্রুপসহ যাঁরা এখানে অনুষ্ঠান করেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আপনারা জানেন, জন লোকপাল বিলের খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন তাই আমাদের দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে। সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। এখন সবার আগে এই বিলটা পাস হওয়া দরকার। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আবার আমাদের প্রতিবাদে নামতে হবে। খসড়া বিল তৈরি পর্যন্ত চলতে থাকবে আমার প্রথম প্রতিবাদের পর্যায়। যখন এই খসড়াটি মন্ত্রীদের কাছে যাবে তখন শুরু হবে পরের সংগ্রাম। তারপর এটাকে নিয়ে যেতে হবে সংসদে। এমনকি তখনো যদি প্রয়োজন হয়, জাতীয় পতাকা হাতে আমরা সংসদ অভিমুখে যাত্রা করব।
সারা দেশে এ রকম অনেক ইস্যু আছে। আমরা হয়তো সবকিছুর সমাধান এখন করতে পারব না। যেমন রয়েছে কৃষকদের সমস্যা, শিক্ষার সমস্যা, শ্রমিকদের সমস্যা। এখানে আমাদের দুটি বা তিনটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। জন লোকপাল বিল কার্যকর হওয়ার পর, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আবার আমাদের চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে না গেলে দুর্নীতি কোনো দিন কমবে না।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হলো আরেকটা বিষয়, যা করা দরকার। ভোটারদের তরফে পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনগুলোর প্রতিনিধিদের প্রত্যাহারের অধিকার থাকতে হবে। কোনো সংসদ সদস্য যদি জনগণের অজ্ঞাতসারে অর্থ খরচ করেন, তবে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের অধিকারও জনগণের হাতে থাকা দরকার। আমি সরকারের কাছে এ বিষয়ে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
এই প্রতিবাদের মাধ্যমে বিরাট শক্তি ও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আমাদের উচিত সবগুলো রাজ্যে সংগ্রাম ছড়িয়ে দেওয়া, তলা থেকে ওপর পর্যন্ত। আমাদের বড় একটি গোষ্ঠী গঠন করতে হবে। সেই গোষ্ঠীর প্রত্যেককেই হতে হবে সৎ ও সত্যবাদী। আমাদের ধ্যান-ধারণাও হওয়া উচিত খাঁটি, আমাদের চেষ্টা হওয়া উচিত এমন বিশুদ্ধ যাতে সাধারণ মানুষকে আমরা নেতৃত্ব দিতে পারি। এটা তখন বিরাট এক শক্তি হয়ে উঠবে। নইলে মধ্যপথেই আমরা ঝরে যাব।
আজ একটি দাবি পূর্ণ হয়েছে। একইভাবে, আবারও আমরা নতুন কোনো সমস্যা নিয়ে একের পর এক আন্দোলনে নামব। আমাদের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামে আবার আমরা জয় পাব।
ভারতের দ্য তেহেলকা ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ ফারুক ওয়াসিফ
News Sours http://www.prothom-alo.com/detail/news/145800
আজ আমি আমার অনশন ভাঙলাম। একটা নোটিশ জারির মাধ্যমে সরকার আমাদের দাবি পূরণ করার ঘোষণা দিয়েছে। গত পাঁচ দিনের বিক্ষোভের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমি লক্ষ করেছি। সব ধর্মের, জাতের, বর্ণের ভাইয়েরা-বোনেরা একসঙ্গে এসে দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা জানিয়েছে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আবারও আমরা দুনিয়ার সামনে দেখালাম যে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
স্লোগানের মধ্যে আমরা ভগত সিংয়ের নাম শুনেছি, শুনেছি রাজগুরুর নাম। এসব স্লোগান দিয়েই তাঁরা ব্রিটিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। আজ আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশের বাদামি সাহেবদের নির্ঘুম রাত উপহার দিয়েছি। এটাও আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আমাদের এই প্রতিবাদের খবর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, মিডিয়া হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাঁরা দেখিয়েছেন, দেশের জন্য তাঁরা কী করতে পারেন। আজ আমরা সেই চতুর্থ স্তম্ভের শক্তি ও ক্ষমতা দেখতে পেয়েছি।
যেসব ভাইবোন আমার সঙ্গে যন্তর-মন্তরে বসে অনশন করছিলেন, আজ তাঁরাও অনশন ভেঙেছেন। আমি তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। এই দাবিতে দেশের অন্য জায়গায় যাঁরা সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমি গিয়ে গিয়ে দেখা করব।
এই প্রতিবাদে তরুণদের অংশগ্রহণ এক জোরালো আশার আলোকরশ্মির মতো। দেশের সব তরুণ এই দাবিতে উঠে দাঁড়িয়েছে। তরুণদের শক্তিই একটি দেশের শক্তি। যারা দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে, আমি সেসব তরুণকেও ধন্যবাদ জানাই। দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তারা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তারা সবাই জীবনশৈলী চর্চার অংশ। এই মুহূর্তে আমি পণ্ডিত রবিশঙ্করের বার্তা পেলাম। জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে যে তরুণেরা এখানে এসেছে, তিনি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই প্রতিবাদে যাঁরা তাঁদের মন, শরীর এবং আত্মা দিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই। আমি অস্মিতা থিয়েটার গ্রুপসহ যাঁরা এখানে অনুষ্ঠান করেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আপনারা জানেন, জন লোকপাল বিলের খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন তাই আমাদের দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে। সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। এখন সবার আগে এই বিলটা পাস হওয়া দরকার। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আবার আমাদের প্রতিবাদে নামতে হবে। খসড়া বিল তৈরি পর্যন্ত চলতে থাকবে আমার প্রথম প্রতিবাদের পর্যায়। যখন এই খসড়াটি মন্ত্রীদের কাছে যাবে তখন শুরু হবে পরের সংগ্রাম। তারপর এটাকে নিয়ে যেতে হবে সংসদে। এমনকি তখনো যদি প্রয়োজন হয়, জাতীয় পতাকা হাতে আমরা সংসদ অভিমুখে যাত্রা করব।
সারা দেশে এ রকম অনেক ইস্যু আছে। আমরা হয়তো সবকিছুর সমাধান এখন করতে পারব না। যেমন রয়েছে কৃষকদের সমস্যা, শিক্ষার সমস্যা, শ্রমিকদের সমস্যা। এখানে আমাদের দুটি বা তিনটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। জন লোকপাল বিল কার্যকর হওয়ার পর, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আবার আমাদের চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে না গেলে দুর্নীতি কোনো দিন কমবে না।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হলো আরেকটা বিষয়, যা করা দরকার। ভোটারদের তরফে পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনগুলোর প্রতিনিধিদের প্রত্যাহারের অধিকার থাকতে হবে। কোনো সংসদ সদস্য যদি জনগণের অজ্ঞাতসারে অর্থ খরচ করেন, তবে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের অধিকারও জনগণের হাতে থাকা দরকার। আমি সরকারের কাছে এ বিষয়ে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
এই প্রতিবাদের মাধ্যমে বিরাট শক্তি ও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আমাদের উচিত সবগুলো রাজ্যে সংগ্রাম ছড়িয়ে দেওয়া, তলা থেকে ওপর পর্যন্ত। আমাদের বড় একটি গোষ্ঠী গঠন করতে হবে। সেই গোষ্ঠীর প্রত্যেককেই হতে হবে সৎ ও সত্যবাদী। আমাদের ধ্যান-ধারণাও হওয়া উচিত খাঁটি, আমাদের চেষ্টা হওয়া উচিত এমন বিশুদ্ধ যাতে সাধারণ মানুষকে আমরা নেতৃত্ব দিতে পারি। এটা তখন বিরাট এক শক্তি হয়ে উঠবে। নইলে মধ্যপথেই আমরা ঝরে যাব।
আজ একটি দাবি পূর্ণ হয়েছে। একইভাবে, আবারও আমরা নতুন কোনো সমস্যা নিয়ে একের পর এক আন্দোলনে নামব। আমাদের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামে আবার আমরা জয় পাব।
ভারতের দ্য তেহেলকা ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ ফারুক ওয়াসিফ
News Sours http://www.prothom-alo.com/detail/news/145800
0 comments:
Post a Comment
Thanks For Comment Pediabd Group Web Site. Every Day update News from get PediaBD News. And Update Picture Update All Web Site Visit http://www.yahoobest.com/ or
http://www.pediabd.com/